গোমতী নদী
মাসুদ রানা
ভাগ্য করে জন্মেছি গোমতী নদীর তীরে
বছরজুড়ে মৎস্য শিকারে , যায় যে সময় কেটে
নিজেরা খাই, বিক্রি করি, খরা জাল বরশি দিয়ে ধরে
আনন্দের আর শেষ নাই, দক্ষিণা বাতাস,
ঘুমাই আরাম করে
ছেলেপেলে গোসল করে, উদাম গতরে
লাফালাফি শেষ নাই, তিরিং বিরিং করে
লাই খেলে সবাই মিলে, ডুব সাঁতার আর প্রচন্ড স্রোতে
সুইমিং পুল লাগে না, ঝরনা লাগে না, পুকুর লাগে না,
আমাদের গোমতি আছে বলে
ভাগ্য করে জন্মেছি গোমতী নদীর তীরে
জোসনা রাতে নদীর পানি, রুপার মতো চকচক করে
কল কলিয়ে বয়ে যায় পানি,
মনে হয়, নদী কয় কথা আমাদের সাথে
অনেকেই বুঝে, অনেকেই বোঝেনা,
কি বলতে চায়, নদী আপন মনে
দাদুরা বুঝেন, জীবনটা কাটিয়েছে তো নদীর সাথে
গ্রাম যে এত সুন্দর,
না কাটালে রাত, গোমতির নদীর তীরে,
বুঝবেই না কেউ,
গ্রামের মোহ মায়া কেন এত আকৃষ্ট করে আমাকে
জোসনা রাতে শীতল বাতাসে
স্বামীর সোহাগ যায়, যে বেড়ে
হাসনাহেনার গন্ধ যখন ঘরের মধ্যে গান গাইয়া উঠে
চান্দের আলো বউয়ের মুখে পড়তেই
লজ্জায় লাল হইয়া মুচকি হাসে
সারাদিনের গাধার খাটুনি
পাওয়া না পাওয়ার যত অভিমানের চিঠি
আমরা দুজনে নিমিষেই যাই ভুলে
জামাই যখন জাপটাইয়া দুই বাহু দিয়া
শক্ত কইরা বুকের মধ্যে জড়াইয়া ধরে
ঘুমতি নদীর পানি কল কলাইয়া বইয়া চলে
জমকুলি কুলি পাখিটা ডাকে, হুটহাট করে
কখন যে কার বিপদ আইবো, কমু কেমন করে
নদী ও সংকেত দেয় মাঝে মাঝে
তখন ঘুমাই না, জাইগা থাকি সবাই মিলে
নদী ভাঙ্গার সময়ে , বজ্রাঘাত মাথার পরে
না ভয় পাই না, এই যুদ্ধ ছোটবেলা থেকে
বাবা যুদ্ধ করেছে, দাদা করেছে, আমি করছি
আমার সন্তান করবে
খালি মাথাটা একটু উত্তেজিত থাকে,
পাগল পাগল লাগে
বিড়ি ফুকতে থাকে
কেউ আবার কল্কি নিয়ে বসে
আসল কথা হইল ঘুমানো যাবে না রাতে
রাক্ষসের শক্তি অনেক বেশি
কুলায়া উঠতে পারি না, হেরে যাই, সঙ্গবদ্ধ নীতি
সবাই জীবন দিয়ে দিতে রাজি
এই যুদ্ধে আত্মরক্ষায় একমাত্র গতি
পরাজয় জেনেও, যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করি
মাতৃভূমির মায়া, স্মৃতি, আগলে রাখার চেষ্টা করি
বৃদ্ধরা নামাজ পড়ে,
দুই হাত তুলে কান্দে আল্লাহর কাছে
যুবতী মেয়েরা জিকির করে, ঠোঁট নড়ে,
পানি গরম করে, বিপদের দোয়া পড়ে
যুবকরা সব পাহারায় থাকে
কহন যে গোমতি কোন বাড়িটারে খাইয়া ফেলে
গরম চা একটু পর পরে, মাইয়ারা লইয়া আহে
জাইগা থাকতে হবে ঘুমাইলে চলবে না
ঘর বাছাইতে হবে, ভিটাত নিয়ে যাবে স্রোতে
ফল বাঁচাতে হবে, গাছতো তলিয়ে যাবে নদীতে
পশু বাঁচাইতে হবে, খোয়ার ঘর গোমতী খাইয়া নেবে
মানুষ বাঁচাতে হবে, শিশু বাছাইতে হবে,
খাদ্য বাঁচাতে হবে
পরনের কাপড় বাচাইতে হবে
কারণ পরের দিন তো রাস্তায় থাকতে হবে
রাস্তায় প্রস্রাব পায়খানা করতে হবে
রাস্তায় খাবার খাইতে হবে
খোলা আকাশের নিচে ঘুমাইতে হবে
রোদ ঝড় বৃষ্টি, আমাদের সঙ্গী হবে
সরম লজ্জা ভাইঙ্গা খোলা আকাশের
নিচে তোমার বুকে মাথা রাইখা ঘুমাইতে হবে
হয়তো ভুল করেই ঘুমের ঘোরে, অচেতন মনে
তবুও বেঁচে থাকতে হবে
আশায় বুক বাঁধতে হবে
আমি তো বাবা
আমার পরিবারের খেয়াল আমাকে রাখতে হবে
যুদ্ধের ময়দানে হোক কিংবা খোলা আকাশের নিচে
পুরুষ বড় অসহায়,
তবু অপরাজেওযোদ্ধা পৃথিবীর বুকে
কে কোথায় আছিস তাড়াতাড়ি ছুটে আয়
মসজিদের মাইকে ডাক দিছে…..
রহিমের বাড়ি ভাঙছে
গরু বাছুরসহ,গরুর ঘরটা নদীতে বিলীন হয়েছে
রাক্ষসের পেটে গেছে, রাক্ষস বড় ক্ষুধার্ত
বড় উত্তেজিত, হায় আল্লাহ কি যে হবে
আমাদের ফরিয়াদ শোনো, আমাদেরকে রক্ষা করো
আমাদেরকে রক্ষা করো
তাড়াতাড়ি আয়, ঘরবাড়ি যাচ্ছে, মানুষও যাচ্ছে
হাসনাহেনা গাছটাও গেল, বউ তাকিয়ে আছে
ভাগ্য করে জন্মেছি গোমতী নদীর তীরে
বাপ দাদার ভিটে গেল
তাদের কবরে গেল চলে
বংশের নাম গেল মুছে
আমরা এখন যাযাবর
হে আমার আল্লাহ আশ্রয় দাও মোরে
বংশের নাম গেল মুছে
আমরা যে এসেছিলাম পৃথিবীতে
ভাগ্য করে জন্মেছি গোমতী নদীর তীরে।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।