চান্দগাঁও–বোয়ালখালীতে নৌকার মাঝি কে হতে যাচ্ছে
কামরুল ইসলাম
চট্টগ্রাম–৮ (চান্দগাঁও–বোয়ালখালী) আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর এই আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই আসনটিতে আগামী তিন মাসের মধ্যে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৮ আসন থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একাংশের সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল নৌকা প্রতীকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি বেশি দিন দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।
মাত্র ১ বছরের মাথায় ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৫টায় ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণ হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম–৮ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ।
তিনি ৩ বছরের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে আবারো এই আসনে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই উপ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।
এদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি এস এম আবুল কালাম, ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন এবং বিএনএফ–এর সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ।
উপ নির্বাচনের ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম বলেন, দলের সভানেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দলের সভানেত্রী আমাকে ২০০৮ সালে এবং ২০১৪ সালে এই আসন (চট্টগ্রাম–৮) থেকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু মহাজোটের কারণে পরবর্তীতে সভানেত্রীর সিদ্ধান্তে ছেড়ে দিয়েছি।
এ কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ১০ বছর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে রেখেছেন–চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য। এখন উপ নির্বাচনে যদি আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচন করবো। এই ক্ষেত্রে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমার জীবন–যৌবন এই এলাকার জনগণের সাথেই কেটেছে। এলাকার জনগণের সুখে–দুঃখে সব সময় পাশে ছিলাম।
সিডিএতে ১০ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ ওয়ার্ডের অনেক উন্নয়ন করেছি। আমাদের পুরো পরিবার এই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে। এলাকার মানুষ আমাদেরকে ভালোবাসে।
উপ নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন বলেন, মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে–দলের ব্যাপারে। চট্টগ্রাম–৮আসনের সবচেয়ে বেশি ভোট হচ্ছে নগরীর অংশে (চান্দগাঁও–মোহরা–পাঁচলাইশ)। আমি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র হিসেবে যদি দল বিবেচনা করে তাহলে আমি নির্বাচন করবো।
আমি মেয়র থাকা অবস্থায় এই আসনের নগরীর অংশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এলাকার প্রতিটি ইউনিট থেকে শুরু করে ওয়ার্ড–পাড়া–মহল্লায় প্রতিনিয়ত নানান রাজনৈতিক–সামাজিক–ধর্মীয় ও ক্রীড়ার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি।
এক সময় এটি বোয়ালখালীর আসন বলা হলেও এখন এটি আর নেই। বোয়ালখালীর একটি ইউনিয়ন রাঙ্গুনিয়া সংসদীয় আসনে চলে গেছে। নগরীর চান্দগাঁও–মোহরা–পাঁচলাইশ–মোহাম্মদপুরের বৃহৎ একটি অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম–৮। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব কিছু বিবেচনা করে যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচন করবো।
এস এম আবুল কালাম বলেন, এটা আমার আসন। আমি এই আসন থেকে নির্বাচন করবো। এই আসনের আমি দাবিদার। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলে অনেকেই মনোনয়ন চাইবে। আমি ২০০৮ সালে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অন্য জায়গায় প্রোভাইট করবো।’ পরবর্তীতে আমাকে রাষ্ট্রদূত করেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি কুয়েতে ছিলাম।
সেখান থেকে এসে আর মনোনয়ন চাইতে পারিনি। এই আসন থেকে আমি ১৯৮৬ সালে এবং ২০০১ সালে দলের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেছি। ২০০১ সালে আমি ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছি। আমি সারা জীবন এই আসনের জনগণের সুখে–দুঃখে ছিলাম। আমি এই এলাকার সন্তান। দলের দুর্দিনে এই এলাকায় নেতাকর্মীদের সাথে আমিই ছিলাম। এখন সামনে উপ নির্বাচন হবে। আমি এই আসনে মনোনয়ন চাইব।
এদিকে চট্টগ্রাম–৮ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমার বাড়ি বোয়ালখালী, শহরের বাড়ি পাঁচলাইশ। দুইদিকেই আমি এই সংসদীয় আসনের নাগরিক। আমি স্কুল জীবন থেকে বোয়ালখালী, পাঁচলাইশ–চান্দগাঁও সহ চট্টগ্রামের মানুষের নাগরিক সুযোগ–সুবিধার দাবিতে আন্দোলন–সংগ্রামে সব সময় সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলাম। এখন সময়ের সাথে পরিবর্তন দরকার। মানুষের নাগরিক–সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য কাজ করার মানসিকতা দরকার।
এই অঞ্চলের মানুষের কালুরঘাট সেতুসহ অনেক নাগরিক চাহিদা রয়েছে। এইগুলো পূরণ করার মত যোগ্য প্রার্থী দরকার। আমি নির্বাচিত হলে এই এলাকার নাগরিক সুযোগ–সুবিধাগুলো নিশ্চিত করবো। আমি মেয়র নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। দল থেকে মনোনয়ন দেয়নি। তাই নির্বাচন করিনি। এখন উপ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে সংসদ সদস্য হতে চান বিএনএফ–এর সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ। প্রধানমন্ত্রী আমাকে একবার সুযোগ দিয়েছেন। আমি এমপি হয়েছি। এবার যেহেতু আমার এলাকায়
(বোয়ালখালীতে) উপ নির্বাচন হবে– আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে মনোনয়ন চাইবো। প্রয়োজনে আমাকে যদি নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে বলে আমি দল ছাড়া নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবো।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম–৮ আসনটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল, পশ্চিম গোমদনন্ডী, পূর্ব গোমদন্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ, আমুচিয়া ও আহল্লা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। বোয়ালখালী উপজেলার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার।