ছেলের ভালোবাসায় মা মুগ্ধ
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি সাতক্ষীরা
ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে শাড়ির
কুচি ধরে,নিজের স্বামীর বিয়ের আসর থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে মেহেভীন। পিছনে পিছনে কালো পোষাক পরিহিত মহিলা বডিগার্ডরা দৌড়ে যাচ্ছে মেহেভীনের পিছনে, কিন্তু মেহেভীন যেন তাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে । তারা দৌড়ে সামনের দিকে দৌড়াতে লাগলো, কিন্তু পিছনে তাঁকালে হয়তো দেখতে পেতো ঘামার্ত মুখস্রীর আড়ালে থাকা ক্লান্ত রমনীকে,যে গাছের আড়ালে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। মেহেভীন আড়াল থেকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ‘ এই মেহেভীন হাসান তালুকদারকে ধরতে এসেছে,কত বড় সাহস! আমাকে ধরা বুঝি এতোই সহজ? উহু একদমই নয়। মেহেভীন উল্টো দৌড় দিলো পিছন থেকে, তখনি দুখানা বড় বড় গাড়ি মেহেভীনের সামনে এসে দাঁড়ালো। গাড়িগুলো দেখে মেহেভীনের বুঝতে বাকি নেই, এতো লাক্সারিস গাড়িগুলো আর কারো নয় বরং স্বয়ং আরহাম হাসান তালুকদারের যে সম্পর্কে মেহেভীনের স্বামী। মেহেভীন পিছনের দিকে দৌড়াতে চায়, কিন্তু পিছনে আরহামের মহিলা গার্ডদের দেখে থেমে যায়। সে যেন পরেছে মহা এক বিপদে!
একদিকে বাঘ, আরেকদিকে কুমির। কোনদিকে যাবে সে এখন?
ব্লাক ব্লেজার পরিহিত কালো সানগ্লাস পরে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো আরহাম হাসান তালুকদার। আরহামকে দেখেই ভয়ে ঢুগ গিললো মেহেভীন। মেহেভীনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঘড়ি দেখতে দেখতে বললো, ‘ আমার প্রায় ১ ঘন্টা,২ মিনিট,৩৪সেকেন্ড তোমার মতো স্টুপিড মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে লস হয়ে গেলো। জাস্ট আ স্টুপিড মেয়ে একটা।
মেহেভীন কিছুটা সাহস জুগিয়ে মুখ বেকিয়ে জবাব দিলো, ‘ তা বিয়ে রেখে, আমার মতো স্টুপিড মেয়েকে কে খুঁজতে বলেছিলো শুনি? যান না যান আপনার মায়রা টায়রার কাছে যান, শাকচুন্নিটা আপনাকে বিয়ে করার জন্যে একেবারে বসে আছে। ‘
আরহাম মাথা চুলকিয়ে লাজুক হেসে বললো, ‘ হ্যা তা ঠিক, আমার হবু বউ, আমার জন্যে কখন ধরে বিয়ের আসরে বসে আছে, শুধুমাত্র তোমার মতো স্টুপিড মেয়ের জন্যে তাকে অপেক্ষা করাচ্ছি। এখন চলো।’
মেহেভীন হাত ভাজ করে শক্ত গলায় চোখ রাঙ্গিয়ে জবাব দিলো,’ আমি কোথাও যাবো না, কিছুতেই যাবো না। ‘
আরহাম মেহেভীনকে নিজের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘ তোমাকে ছাড়া তো আমি বিয়েই করবো না, তুমি আমার মামার একমাত্র মেয়ে বলে কথা। তাছাড়া নিজের হাজবেন্ডের বিয়ে এটেন্ড করে, সেই বিয়েতে ইঞ্জয় করাও কিন্তু একটা মজাদার ব্যাপার কি বলো? আর তো কিছুক্ষন তারপর তো তুমি এই সো ক্লড বিয়ের বাধন থেকে মুক্ত হয়ে যাবে তাইনা?’
আরহামের শেষের কথায় চুপ হয়ে যায় মেহেভীন। হ্যা আরহামের সাথে সে বিবাহ নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ, যার সমাপ্তি তালাকনামা নামক তিক্ত শব্দে। হ্যা সে আরহামকে ভালোবাসে না। তাদের মিথ্যে বিয়ে নামক বন্ধন থেকে সেও মুক্ত হতে চায়, তবে কেন আজ তার বুকে চিনচিনে ব্যাথা করছে? কি এই ব্যাথার উৎস?
মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই সে উপলব্ধি করে সে হাওয়ায় ভাসছে অর্থাৎ আরহাম তাকে কোলে তুলে গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মেহেভীন নিজের হাতপা ছাড়িয়ে বলতে থাকে, ‘ কি করছেন কি?
এখুনি আমাকে নামান বলছি। অসভ্য লোক একটা। নিজের হবু বউকে কোলে নিয়ে বসে থাকুন। আমাকে ছেড়ে দিন,আমি কিছুতেই আপনার সাথে যাবো না। ‘
আরহাম মেহেভীনের দিকে ধমকের সুরে বলে, ‘ স্টুপিড মেয়ে একটা! বেশি কথা বলো কেন? আমার হবু বউকে বিয়ের পরে সারাবাড়ি কোলে নিয়ে ঘুড়বো, তা নিয়ে তোমার থেকে এডভাইস নিতে হবে না, আপাতত নিজের প্রেজেন্ট ওয়াইফকে কোলে করে,আমার বিয়ের আসরে বসিয়ে, নিজের বিয়ে দেখাবো। হাজবেন্ডের বিয়ে আরামের সহিত বসে বসে দেখবো। আলাদা একটা ফিলিংস! কজনের তোমার মতো ভাগ্য হয় বলতো?’
মেহেভীন আরহামের কথায় মুখ বেকিয়ে রাগে ফুসফুস করতে লাগলো। আরহাম তা দেখে আলতো হেসে,পিছনে থাকা নিজের লেডি গার্ডসদের ‘লেটস মুভ’ বলে গাড়িতে মেহেভীনকে সাথে নিয়ে উঠে গেলো। পিছনের গাড়িতে আরহামের দেহরক্ষী রয়েছে। সামনের গাড়িতে শুধুমাত্র আরহাম এবং মেহেভীন। আরহাম গাড়ি চালাচ্ছে, তার পাশে মেহেভীন বসে রয়েছে, হাতে ডিভোর্স পেপার নিয়ে। আরহাম সেই ডিভোর্স পেপার টার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর সুরে বলে,
‘ এখনো সাইন করো নি? আচ্ছা সাইন না করলে আমাদের ডিভোর্সটা হবে কীভাবে? কিছুক্ষন পর আমার বিয়ে। আমি চাইনা তুমি আমার স্ত্রীর অধিকার নিয়ে আমার বিয়েতে কোনরুপ ঝামেলা ক্রিয়েট করো। সো যত আরলি পারো, সাইন করে দাও।’
মেহেভীন অসহায়ভাবে ডিভোর্স পেপার টার দিকে তাঁকালো। ডিভোর্স পেপারে জ্বলজ্বল করছে আরহামের সাইন, পাশের জায়গাটা খালি পরে আছে। মেহেভীনের একটিমাত্র সাক্ষরে হয়তো সেই জায়গাটি পরিপূর্নতা পাবে। মেহেভীন সুদীর্ঘশ্বাস ফেলে অদৃশ্য এক কষ্টে কাঁপাকাঁপা হাতে ডিভোর্স পেপার সাইন করে দিলো। যদিও তার কিছুটা কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু তার এইভাবে ভালো লাগছে সে এখন মুক্ত! সে এখন তার ভালোবাসার মানুষের কাছে ফিরে যেতে পারবে।
সাইন করার সঙ্গে সঙ্গে আরহাম গাড়ির একটা জোড়ে ব্রেক কষলো। মেহেভীন ব্রেক কষাতে কিছুটা ঝুঁকে গেলো। পাশে তাকাতেই, আরহাম মুখ ঘুড়িয়ে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। মেহেভীন বুঝতে পারলো না, আরহাম হঠা ফিরে এলো, তখন মেহেভীন দেখতে পেলো আরহামের বা হাতে কেমন র/ক্ত জমাট বেঁধে আছে। আরহাম তীব্র নিঃশ্বাস ফেলছে সময়ের সাথে সাথে। মেহেভীনকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে, আরহাম গাড়ি তালুকদার বাড়ির দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। মেহেভীন সম্পর্কে আরহামের মামাতো বোন হয়। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
আরহামের মায়ের ক্যান্সার ধরা পরেছে, ডক্টর বলেছে হাতে সময় কম। এই সময়ে তিনি আবদার করে বসেছেন, মেহেভীনকে তিনি নিজের ঘরের বউ করে আনবেন। মায়ের আবদার আরহাম পূরণ করতে, কোনরুপ দ্বিধা করে না। মেহেভীনের বাবাও বোনের শেষ ইচ্ছে রাখেন, কিন্তু সমস্যা দাঁড় করায় মেহেভীন। সে কিছুতেই আরহামকে বিয়ে করতে চায় না। তার পিছনেও বেশ বড় কারণ রয়েছে, তার কারণ অভ্র। যার সাথে পূর্বে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। মেহেভীনের আরেকজন মামাতো ভাই, সে নিজেদের ব্যবসার কাজে অস্ট্রেলিয়া রয়েছে। ছোটবেলা থেকে মেহেভীন তাকে পছন্দ করলেও, অভ্র করে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ। আরহামের মায়ের ইচ্ছেতে অভ্রের বাবা-মা ও আপত্তি করেনি, কিন্তু অভ্র সমপূর্ণ মেহেভীনের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মেহেভীনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়