জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ৫শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ির মেলা বসেছে
মোঃ জাহিদুল ইসলাম
জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি
প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার দিনটি উৎসব মুখর হয়ে ওঠে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সন্ন্যাসতলী মেলাকে কেন্দ্র করে। জ্যৈষ্ঠের শেষ শুক্রবার একদিন ব্যাপী এই মেলা আয়োজন করা হলেও মেলা চলে শনিবার পর্যন্ত। এ মেলাকে ঘিরে শিশু-কিশোরসহ নানান বয়সের মানুষ মেতে উঠে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি উড়ানোর উৎসবে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার। হিন্দু সম্প্রদায়ের সন্ন্যাস ঠাকুরের পুজা উপলক্ষে, ক্ষেতলাল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর-জিয়াপুর গ্রামের তুলসীগঙ্গা নদীর কোলঘেঁষে বসে ৫শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই সন্ন্যাসতলীর মেলা। আর এ মেলাকে কেন্দ্র করে নানা বয়সের মানুষ মেতে উঠে হরেক রকম ঘুড়ি উড়ানোর উৎসবে। কার ঘুড়ি কত উঁচুতে উঠে আর কে কার ঘুড়ির সুতা কেটে দিতে পারে, দিন ভর চলে এমন প্রতিযোগীতা। গ্রামীণ এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশে-পাশের গ্রামের বাড়ি-বাড়ি মেয়ে-জামাইসহ আত্নীয় স্বজনের আগমন ঘটে। এ মেলার মূল আর্কষন নানা রকমের ঘুড়িসহ বাঁশের তৈরী মাছ শিকারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। আর এসব ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফলমুল, হরেক রকমের মিষ্টি, বাঁশের তৈরী সাংসারিক কাজে ব্যবহত বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র এবং কাঠের আসবাবপত্র পাওয়া যায় এ মেলায়। সাথে আছে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর দোকান। মেলার দ্বিতীয় দিন অথ্যাৎ শনিবার মেলা উন্মুক্ত থাকে মেয়েদের কেনা কাটার জন্য। ঐতিহ্যবাহী এ মেলাকে কেন্দ্র করে পুরো মেলাস্থল সকল ধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। শুক্র থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের সমাগমে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় মেলা প্রাঙ্গণে।
স্থানীয় জিয়াপুর গ্রামের আসলাম হোসেন বলেন, আমার জন্মের পর থেকে এই মেলা দেখে আসতেছি। ঐতিহ্যবাহী সন্ন্যাসতলীর এই মেলাকে ঘিরে আশপাশের জেলা থেকে অনেক মানুষ আসে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করতে। এ মেলার মূল আকর্ষণ ঘুড়ি।
মেলায় ঘুড়ি বিক্রি করতে আসা বগুড়া শেরপুর এলাকার আশরাফ শেখ বলেন, দুই বছর ধরে এই মেলায় ঘুড়ি বিক্রি করতে আসি। এবছরও এসেছি ভালো ঘুড়ি বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় ঘুড়ি ক্রেতা দুঁপচাচিয়ার জিল্লুর বলেন, মেলায় এসে ৮টি ঘুড়ি কিনেছি ৬০ টাকা করে। মেলায় ঘুরে অনেক ভালো লাগতেছে।
সন্ন্যাসতলী মেলা কমিটির সভাপতি মন্টু চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমার বাপ-দাদাসহ পূর্ব পুরুষেররা এই মেলা করে গেছেন। আমাদের জন্মের পরে আমরা মেলাটি করে আসতেছি। এই মেলার আনুমানিক বয়স ৫শ বছর। প্রতিবছরের মতো এবারও বসেছে সন্ন্যাসতলী মেলা। মেলাটি হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে পরিচালনা করে থাকি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এই মেলায় আসেন।
ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, সন্ন্যাসতলী মেলা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আয়োজনে হলেও বর্তমানে সব জাতের মানুষের মিলনমেলা পরিনত হয়েছে এই মেলা। মেলার মূল আকর্ষণ ঘুড়ি। এ মেলাকে ঘিরে আশপাশের জেলা থেকে বিপুল পরিমাণ মানুষের সমাগম ঘটে।