রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রোগীর তুলনায় বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের উপস্থিতি একটি বহুল আলোচিত সমস্যা। এটি শুধু হৃদ্রোগ হাসপাতালেই নয়, অন্যান্য হাসপাতালেও একটি সাধারণ চিত্র। যদিও সরকার আইন করছে কোনো হাসপাতালে কোনো ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ঢুকতে দেয়া হবে না কিন্তু বাস্তবে তার উলটো ব্যবস্থাপনা। হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে বহির্বিভাগ হয়ে ১০১ নামার থেকে শুরু করে ১০২/১০৩/১০৪/১০৫/১০৬/১০৭/১০৮/
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ১০৩ নাম্বার রোমের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এদিকে রোমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীরা রোমে ওকিজকি মারলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুগীদের উদ্দেশ্যে বলেন বেশি ডিস্টার্ব করলে কাউকে দেখবো না। এমন অবস্থা প্রায় সকল চিকিৎসকদের রোমের সামনে দেখা যায়। আজ ছদ্মবেশে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য জাতীয় দৈনিক মানবাধিকারের স্টাফ রিপোর্টার সেখানে যান এবং তিনি ১০৩ নাম্বার রুমের হালচাল দেখে পরে বাকি চিকিৎসকদের রুমের পরিবেশ গুলো দেখেন। এক পর্যায়ে ১০৩ নাম্বার রুমের কর্তব্যরত চিকিৎসক চোখ লাল করে রুম থেকে বাহির হতে বলেন।
এমন অবস্থা যদি চিকিৎসকরা করে তাহলে সাধারণ রুগীদের কি হবে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন। আমি একজন দৈনিক পত্রিকার নিউজ রিপোর্টার হয়ে এমন পরিস্থিতি কে তীব্র নিন্দা জানাই এবং মাননীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি। অচিরেই হাসপাতাল থেকে দালাল মুক্ত ,
ওষুধ কোম্পানি রিপ্রেজেন্টেটিভ মুক্ত করে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের সঠিক চিকিৎসা নিতে পারে সেই পরিবেশ করবেন বলে আশা ও বিশ্বাস করি।
সমস্যার মূল কারণ ব্যবসায়িক স্বার্থ ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য প্রচার এবং চিকিৎসকদের কাছে তাদের ওষুধ ব্যবহারের সুপারিশ পাওয়ার জন্য প্রতিনিধিদের (মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ) নিয়োগ দেয়। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার শিথিলতা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, ফলে তারা রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকদের সময় নষ্ট করে।
অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান কিছু প্রতিনিধিরা চিকিৎসকদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা (যেমন, উপহার, সম্মেলনে আমন্ত্রণ) প্রদান করে, যা তাদের উপস্থিতি বাড়িয়ে তোলে। চিকিৎসকদের নির্ভরতা অনেক চিকিৎসক নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন বা তাদের পছন্দ করেন, যার ফলে প্রতিনিধিদের প্রভাব বাড়ে।
সমস্যার প্রভাব রোগীদের হয়রানি। প্রতিনিধিদের উপস্থিতি রোগীদের জন্য অপেক্ষার সময় বাড়ায় এবং চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত হয়। স্বাস্থ্য সেবার মান কমে যাওয়া,চিকিৎসক ও রোগীদের মাঝে সরাসরি যোগাযোগ কমে যায়, যা সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট,অতিরিক্ত ভিড় এবং প্রতিনিধিদের কর্মকাণ্ড হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট ও বিশৃঙ্খল করে তোলে। সমাধানের উপায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ হাসপাতালের ভেতরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশ সীমিত করতে কঠোর নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ হাসপাতালের বাইরে বা নির্ধারিত সময়ে প্রতিনিধিদের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি
রোগী এবং তাদের পরিবারের মধ্যে এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং অভিযোগ করার সুযোগ রাখা প্রয়োজন।
প্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিনিধিদের প্রবেশ এবং উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল পদ্ধতি (যেমন, পরিচয়পত্র স্ক্যান) প্রয়োগ করা যেতে পারে। বিকল্প যোগাযোগ পদ্ধতি ওষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার একটি বিকল্প পদ্ধতি তৈরি করা যেতে পারে, যেমন: অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা সম্মেলন। এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হাসপাতালের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা এবং রোগীদের চিকিৎসা সেবা সহজতর করা সম্ভব।