নগরীতে হাহাকার আপনজনের কাছে ছুটছে মানুষ আর মাত্র তিনদিন পর ঈদ
কামরুল ইসলাম চট্টগ্রাম
কোলাহলমুখর নগরী আজ হাহাকার করছে । কাছের মানুষ কে সাথে নিয়ে ঈদ করতে গ্রামে ছুটছে মানুষ আর মাত্র তিনদিন পর ঈদ । ঈদ উল ফিতরের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে আজ থেকে। টানা ছয়দিনের ছুটির ফাঁদে দেশ। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৯ এপ্রিল (আজ) থেকে আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি। মূলত গতকাল (মঙ্গলবার) অফিস শেষ করে অধিকাংশ নারী পুরুষ যাত্রা শুরু করেছে নাড়ির টানে। তবে ঈদ আসলেই ইচ্ছেমতো বাড়তি ভাড়া আদায় করেন মাস মালিকেরা। প্রতিবছর ঈদের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে বাড়তি ভাড়া না নেয়ার অঙ্গীকার করলেও বাস মালিকরা তা কখনো বাস্তবায়ন করেন না। কথা ছিল প্রতিটি কাউন্টারে বাস ভাড়ার তালিকা দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখা হবে। যথারীতি এবারো তা করা হয়নি।
গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে প্রধান প্রবেশমুখ অলংকার, শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর, অক্সিজেন এলাকা ঘুরে দেখা যায় ঘুরমুখো মানুষের ভিড়।
শাহ আমানত সেতুর বশরুজ্জামান চত্বরে দেখা যায় যানবাহনের প্রচুর ভিড়। তবে ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা করছে চত্বরটি যানজটমুক্ত রাখতে।
ট্রাফিক বিভাগ জানায়, বশরুজ্জামান চত্বর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী বেশ কিছু যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। কিন্তু সেখানে কোন টার্মিনাল কিংবা পার্কিং ব্যবস্থা নেই। এখানে দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী বাস ছাড়াও শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বরজুড়ে নগরীতে চলাচলকারি বেশ কিছু রুটের বাস, মিনিবাস ও অটো টেম্পোর স্টার্টিং ও এন্ডিং পয়েন্ট রয়েছে। যার কারণে প্রচুর সংখ্যক যানবাহন অবস্থান করে সেখানে।
ট্রাফিক-দক্ষিণ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এন.এম নাসিরুদ্দিন জানান, ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে আমরা চেষ্টা করছি। শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বরে ডাবল লাইনে গাড়ি, মৌসুমী টিকেট কাউন্টার কিংবা একই কোম্পানির একাধিক গাড়ি একসাথে কাউন্টারের সামনে দাঁড়াতে দিচ্ছি না।
বৈশাখের তীব্র তাপদাহে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন পেকুয়ার আনিস উদ্দিন। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনিস উদ্দিন জানান, তার কর্মস্থল মূলত ব্যাংকের লেনদেন নির্ভর। মঙ্গলবার (গতকাল) ছিল ব্যাংকের শেষ কর্মদিবস। বিকেল তিনটার মধ্যে ব্যাংক লেনদেন শেষ হয়ে যায়। বললেন, নিজের চাকরি, সন্তানদের স্কুল সব মিলিয়ে পরিবারের সবাই মিলে বাড়ি যাওয়া তেমন একটা হয় না। ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করার মজাই আলাদা। তবে বাসে নয়। মইজ্জ্যার টেক এলাকা থেকে সিএনজি চালিত ট্যাক্সি ছাড়া হয়। ট্যাক্সিগুলো আনোয়ারা-বাঁশখালী হয়ে পেকুয়া পর্যন্ত চলাচল করে।
একে খাঁন মোড় থেকে অলংকার পর্যন্ত সড়কের পাশে দাঁড়ানো বাসের সারি। সাধ্য অনুযায়ী নিজের এবং প্রিয়জনের জন্য কেনাকাটা করেছেন কুড়িগ্রামের আসাদুল কিবরিয়া। বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী আসাদুল বিভিন্ন গণমাধ্যম কে জানান, দশ বছরের অধিক সময় ধরে তিনি বসবাস করছেন নগরীর ইপিজেড এলাকায়। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে একবার কুড়িগ্রাম যেতে আর্থিক বাজেট খুব একটা কম নয়। ঈদ উল আজহায় তেমন বাড়ি যাওয়া হয় না। তবে প্রতিবছর ঈদ উল ফিতরের সময়টুকু কুড়িগ্রামের পৈতৃক ভিটায় কাটান। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। সন্ধ্যায় হানিফ পরিবহনে চেপে বসবেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। প্রায় একবছর পর দাদার বাড়ি যাওয়ার আনন্দই আলাদা বলে জানায় আসাদুলের ছয় বছরের ছেলে নিয়ামুল।
স্কুল বন্ধ হবার পর পরই স্ত্রী সন্তানরা গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মহসিনের। কুমিল্লার বাসিন্দা মহসিন কর্মস্থলের ছুটি শুরু হতেই নাড়ির টানে ছুটছেন শেকড়ের কাছে। তিনি জানান, গ্রামে গেলেই মনে হয় সবুজ গাছের ছায়ায় গা ছুঁয়ে যাওয়া বাতাসটি যেন অন্য সব এলাকার ছেয়ে আলাদা। জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রামে থাকলেও মনটি পড়ে থাকে যে গ্রামের আলো-বাতাসে বড় হয়েছি সেই অজ পাড়া গাঁয়। তাই ছুটি শুরু হবার সাথে সাথেই আর দেরি করিনি।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির প্রবেশমুখ নগরীর অক্সিজেন এলাকা। গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে দেখা যায়, খুব একটা বেশি ভিড় নেই সেখানে। অক্সিজেন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরির্দশক (এসআই) মৃণাল কান্তি দাশ বিভিন্ন গণমাধ্যম কে জানান, ঘরমুখো মানুষের চাপ এখনো তেমন বাড়েনি। তবে বুধবার (আজ) ও আগামীকাল ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়বে। মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে ট্রাফিক বিভাগ ও থানা পুলিশ সমন্বিতভাবে চেষ্টা করছি অক্সিজেন মোড় যানজটমুক্ত রাখতে।
টাঙানো হয়নি ভাড়ার তালিকা : বাস কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করে বাড়তি ভাড়া আদায় করায় ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে নগরীর অলংকার মোড়ে দূরপাল্লার কয়েকটি বাস কাউন্টারে এ অভিযান পরিচালনা করেন বিআরটিএ চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী। তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যম কে বলেন, আমরা কয়েকদিন আগে প্রতিটি কাউন্টারে বাস ভাড়ার তালিকা দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশনা দিয়েছিলাম। ঈদযাত্রায় বাস কাউন্টারে প্রদর্শিত তালিকা না টাঙিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করায় কয়েকটি বাস কাউন্টারকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যাত্রী হয়রানি বন্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হোসেন।