নানা সংকটে ধ্বংসের মুখে পাইকগাছার টালিশিল্প
এফ এম এ রাজ্জাক পাইকগাছা (খুলনা)
রপ্তানি জটিলতা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী টালিশিল্প। অর্ধশতাধিক কারখানার মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ।
টালি কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রপ্তানিতে জটিলতা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কারখানা মালিকেরা। পাশাপাশি দেশি প্রকল্পে ভারতীয় রুপটালির ব্যবহার এ শিল্পকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে গেছে। ফলে দিন দিন কারখানার সংখ্যা কমে গেছে।
জানা গেছে, বর্তমানে গ্রামে টালি কারখানা রয়েছে ৫টি। এক দশক আগে একই এলাকায় টালি কারখানা ছিল ২০টি। আগে কারখানাগুলোয় কমপক্ষে ২ হাজার শ্রমিক কাজ করত। বর্তমানে ৫টি কারখানায় শ্রমিক রয়েছেন সর্বোচ্চ ১০০ জন। বোয়ালিয়া পাল পাড়ার টালি কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ী সুবোধ পাল জানান, পূর্বপুরুষদের পেশার ধারাবাহিকতায় আমরা এখানকার পালরা মাটি দিয়ে টালি তৈরি করে এলাকার পাল বংশের সুনাম কুড়ান। পরবর্তী সময়ে সেই মাটি দিয়ে এখানে নানা নকশার টালি ও টাইলস তৈরি করে বিপ্লব আনি। দেড় দশক আগে সেই টালিশিল্প এতটাই সুখ্যাতি অর্জন করে, এখানকার টালি বিভিন্ন দেশে নিয়মিত রপ্তানি হতো। চাহিদা থাকায় একে একে গড়ে ওঠে ২০/২৫ টি ছোট-বড় টালি কারখানা। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে নানা জটিলতায় সেই শিল্প শেষ হয়ে গেছে। টালিশিল্প ধ্বংসের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা টালি সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করি না। ঢাকার রপ্তানিকারকেরা আমাদের কাছ থেকে টালি কিনে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। সেই রপ্তানিকারকেরা টালিশিল্প ধ্বংসের জন্য দায়ী। এখানকার কারখানা মালিকদের কোটি কোটি টাকা তারা মেরে দিয়েছে। ফলে পুঁজি সংকটে। ভুগতে ভুগতে অনেকেই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের টালি এত উন্নত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের ঠিকাদার স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরিতে ভারতের রুপটালি ব্যবহার করছেন, যেটা দুর্ভাগ্যজনক।’ তিনি ভারত থেকে টালি আমদানি নিষিদ্ধের দাবি জানান।
এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু বলেন, ‘টালিশিল্প আজ ধ্বংসের পথে। মধ্যস্বত্বভোগীরা কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়েছে। কিন্তু টাকা আদায় করা যায়নি। এই অবস্থায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া টালিশিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বিকল্প নেই।’
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল আমিন বলেন, ‘আমরা টালি শিল্পের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য টালি কারখানায় জরিপ চালাবো। পুঁজি সংকটসহ বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ – কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে কিনা। কারখানা মালিকদের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি প্রস্তাব আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।