নিউজিল্যান্ডের গুঁড়োদুধ প্রোডাক্ট নামে বাজার জাত হচ্ছে এনজিএস গুঁড়োদুধ
কামরুল ইসলাম চট্টগ্রাম
কোন দেশে পেয়েছে সোনার খনি কোন দেশে পেয়েছে রূপার খনি বাংলাদেশ পেয়েছে চোরের ও বেজাল পন্য সামগ্রি তৈরি করার খনি।বিষয় বস্তু হচ্ছে নিউজিল্যান্ড
থেকে কোনো দুধ আমদানি না করেও নিউজিল্যান্ডের প্রোডাক্ট ঘোষণা দিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছিল এনজিএস গুঁড়োদুধ। আটা ও হুয়ে (দুধের ঘোল) মিশিয়ে তৈরি করা হতো এসব গুঁড়োদুধ। ডানো ব্র্যান্ডের গুঁড়োদুধের ব্যবহৃত প্যাকেট পুনরায় ব্যবহার করেও বাজারে ছাড়া হতো শিশুখাদ্য আর এই খ্যাদ খেয়ে দিনের পর দিন অসুস্থ হয়ে পড়েছে আমাদের সন্তানরা।
সামা মিল্ক নামে মোড়কের গুঁড়োদুধে আটা ও হুইয়ের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক। ভেজাল ও নিম্নমানের মেয়াদোত্তীর্ণ গুঁড়োদুধ এবং কেমিক্যাল মিশিয়ে এনজিএস ফুল ক্রিম এবং ফেয়ারলাইফ মিল্ক পাউডার নামে দুধ মোড়কজাত করে বাজারে বিক্রি করত এনজিএস ফুড প্রোডাক্টস নামের কোম্পানি। গতকাল টানা প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বিএসটিআই এনজিএস ফুড প্রোডাক্টসের অপকর্ম ও জোচ্চুরি উদঘাটন করে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে কারখানার দায়িত্বে থাকা এনজিএস ফুড প্রোডাক্টসের কর্মকর্তা সাগর দে’কে ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং ১৫ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে সাড়ে ৩৭ হাজার কেজি গুঁড়োদুধসহ কারখানাটির গুদাম সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। সাগরকে গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বিএসটিআই জানিয়েছে, এনজিএস ফুড প্রোডাক্টস নামের কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে দুধ বাজারজাত করলেও তাদের দুধের গুণগত মান নিয়ে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। তারা বিদেশ থেকে দুধ আমদানি করে বাজারজাত করছে বলে প্রচারণা থাকলেও দুধের মান যাচ্ছেতাই হওয়ায় সন্দেহ পোক্ত হচ্ছিল। ফুল ক্রিম গুঁড়োদুধসহ শিশুখাদ্য হিসেবে বিক্রিত দুধের মান নিয়ে নানা দিক থেকে অভিযোগ আসার পর জেলা প্রশাসন ও বিএসটিআই যৌথভাবে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গতকাল বেলা ১টা থেকে আকবরশাহ থানার উত্তর কাট্টলী এলাকায় সিটি গেটের ডান পাশে এনজিএস ফুড প্রোডাক্টস কারখানায় অভিযান পরিচালিত হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে বিএসটিআইয়ের ফিল্ড অফিসার (সিএম) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, ইন্সপেক্টর (মেট্রোলজি) মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, ফিল্ড অফিসার (সিএম) মোহাম্মদ আব্দুর রহিম ও আকবরশাহ থানার পুলিশ কর্মকর্তারা অংশ নেন। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টানা অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিশ্চিত হন, প্যাকেটের গায়ে নিউজিল্যান্ডের প্রোডাক্টস লেখা হলেও এনজিএস মিল্ক বিদেশ থেকে কোনো দুধ আমদানি করে না।
আদালত সূত্র জানায়, এই কারখানায় মূলত ডানো ব্র্যান্ডের গুঁড়োদুধের ব্যবহৃত প্যাকেট পুনরায় ব্যবহার করে কিছু ভেজাল গুঁড়োদুধ ও সামা মিল্ক নামের মোড়কে আটা মেশানো গুঁড়োদুধ ও হুয়ে (যিবু) নামের একটি পণ্য মিশিয়ে এনজিএস ফুল ক্রিম এবং ফেয়ারলাইফ মিল্ক পাউডার নামে দুধ মোড়কজাত করে বাজারে বিক্রি করত। প্রতিষ্ঠানটির দুই প্রকারের গুঁড়োদুধের মধ্যে ফুল ক্রিম মিল্কের সিএম লাইসেন্স থাকলেও সরেজমিনে দেখা যায়, তারা লাইসেন্সের শর্ত পূরণ করেনি। তাদের দুধ প্যাকেটজাত করার কোনো লাইসেন্স নেই।
অন্যদিকে ফেয়ারলাইফ মিল্ক পাউডারের সিএম লাইসেন্স এবং মোড়কজাতের লাইসেন্স কোনোটিই নেই। দুধের সাথে নানা কেমিক্যাল মিশিয়ে বাজারজাত করলেও তাদের কারখানায় নিয়মিত কেমিস্ট নেই। একজন কেমিস্ট থাকার কথা দাবি করলেও তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। মিল্ক পাউডারের মোড়কজাত পণ্য বাজারে নিজ নামে বিক্রি করতে হলে নিজ নামে গুঁড়োদুধ আমদানি করে প্যাকেটজাত করার নিয়ম রয়েছে। সেখানে নানা গোঁজামিলের আশ্রয় নিয়ে এনজিএস বিপুল পরিমাণ ‘গুঁড়োদুধ’ বাজারজাত করে আসছিল।
কারখানার গুদামে প্রতিটি ২৫ কেজি করে দেড় হাজার বস্তা গুঁড়োদুধ পাওয়া গেছে। এগুলোর বস্তায় ডানো ও প্যাকেটে এনজিএস দুধের নাম রয়েছে। সবগুলো গুঁড়োদুধ জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে বিভিন্ন কেমিক্যাল। এখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ল্যাবের রিপোর্ট আসার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।