ভারতে চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যা
সঞ্জয়ও মুখ চেপে ধরেন ওই চিকিৎসকের। সঞ্জয়ের দুই হাতের নখের আঁচড়ে তরুণী চিকিৎসকের মুখে একাধিক ক্ষত সৃষ্টি হয়। এ সময় সঞ্জয়ের হাত চেপে ধরেন তরুণী চিকিৎসক। তাই অভিযুক্তের দুই হাতেও ৬-৭টি নখের দাগ পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ ধারণা করছে, ধস্তাধস্তির জেরে চশমার কাচ ভেঙে যায়। সেই ভাঙা কাচে তরুণীর চোখে আঘাত লাগে এবং রক্তপাত হয়। চিৎকার করলে মুখ আরো জোরে চেপে ধরে তরুণী চিকিৎসকে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়া হয়। এত জোরে গলা টিপে ধরা হয়েছিল যে তার থাইরয়েড কার্টিলেজ ভেঙে যায় এবং অচেতন হয়ে পড়েন। সেই অবস্থায়ই তার পোশাক খোলা হয় এবং চালানো হয় বিকৃত যৌন নির্যাতন।
এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় এই নারী চিকিৎসকে। পরদিন সকালে জুনিয়র সহকর্মীরা ওই হলের ভেতরেই তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এই ঘটনায় আরো কেউ জড়িত থাকার সম্ভাবনা এখনও পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তরুণী চিকিৎসককে যে সেমিনার রুমে ধর্ষণ ও খুন করা হয়, সেটি জরুরি বিভাগের চারতলায়। তদন্তে গিয়ে সিবিআই কর্মকর্তরা সেই ঘর সিল করে দিয়েছেন। সূত্রের খবর, সিল ভাঙার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু সেই ঘরে তারা ঢুকতে পারেনি বলে কলকাতা পুলিশের দাবি।
এ ছাড়া হামলাকারীদের কয়েকজনকে হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শোনা গিয়েছে বলে ওই সূত্র দাবি করেছে। দুষ্কৃতীরা একটা কথা বারবার বলছিল, পাকড়ো মারো জ্বলা দো (মারো জ্বালিয়ে দাও)। এই বাহিনী কেন হামলা চালালো? হাসপাতালে প্রমাণ লোপাট কী তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এই নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশের বড় বাহিনী যখন হাসপাতালে আসে তখন তাদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। কাউকে সেই সময় পাকড়াও করতে পারেনি পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে সমাজমাধ্যমে পুলিশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করে। লাল বৃত্তে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়। এদের সম্পর্কে তথ্য দিতে আহ্বান করা হয় জনতাকে। তাণ্ডবের অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত নার্সদের দাবি, রাত দখলের কর্মসূচি থাকলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছিল না হাসপাতাল চত্বরে। পুলিশ ভয়ে বাথরুম, লিফট, স্ত্রী রোগ বিভাগে আশ্রয় নেয়।এক নার্সের বয়ান অনুযায়ী, ‘হামলার সময় পুলিশই আমাদের কাছে আশ্রয় চেয়েছিল। আমাদের বাঁচানোর বদলে তারা হাসপাতালের ভিতর লুকিয়ে পড়ে। এমনকী রোগীর কম্বলের ভিতরে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে।’
অথচ গত মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ ব্যারিকেড করে রুখে দেয় বিক্ষোভকারীদের। বাম কর্মীদের পাশাপাশি অন্য হাসপাতালের প্রতিনিধিরাও ভিতরে ঢুকতে পারেননি। কয়েকজনকে চুলের মুঠি ধরে, মারতে মারতে বার করে দেয় পুলিশ। সেই বাহিনী গুন্ডাদের হামলার সামনে এমন অসহায় হয়ে পড়ল কেন সেই প্রশ্ন এখন উঠেছে।
চিকিৎসক খুন হওয়ার থেকেই সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে পুলিশের ভূমিকাকে। অস্বাভাবিক মৃত্যু, আত্মহত্যা বলে এই হত্যাকে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। কলকাতা হাইকোর্ট পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার দেয়।
অন্যদিকে, আরজি কর মেডিকেল কলেজে গত বুধবার রাতে ভাঙচুরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে মোট করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনকে ২২ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবারের হামলার ঘটনায় মোট তিনটি মামলা করছে পুলিশ।