ভূমি দূর্ষদের ও চকরিয়া বনবিভাগের সমন্বয়ে বনসম্পদ উজাড়
কামরুল ইসলাম
১১টি বনবিটের আওতায় বিশাল বনাঞ্চলের বিপরীতে বনবিভাগের নগণ্য লোকবল, প্রভাবশালীর চাপ, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভিলেজারদের দ্বিমুখী ভূমিকা, সশস্ত্র বনদস্যুসহ নানা প্রতিকূলতায় বনবিভাগ অসহায় বনরক্ষায়। বিষয়গুলো স্বীকার করলেও এসব বিষয়ে প্রকাশ্য বক্তব্য দিতে নারাজ বনবিভাগের কর্তারা। প্রশাসনের কর্মকর্তারা খবর পেলে ও বনবিভাগ সহায়তা চাইলে ছুটে যায় বনে। পরিবেশ অধিদপ্তর কয়েকদফা অভিযান চালালেও তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে, বৃক্ষনিধন ও পাহাড় সাবাড় করা চলছে সমানতালে। গত ১ বছরে ফাঁসিয়াখালীর উচিতারবিল ও তৎসংলগ্ন অন্তত ৪০টি পাহাড় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে পাহাড়খেকোদের থাবায়।
বন উজাড়ে বাসস্থান হারিয়ে ভয়াবহ অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়ছে বন্যপ্রাণীগুলো। এতে মাঝে-মধ্যে বন্যহাতি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। নষ্ট করে ফসলি জমি, বসবাসের ঘর। বাগে পেলে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়ে বা পায়ে পিষে মারে মানুষ।
বন বিভাগের ১ বছর আগের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের অধীনে ৫টি বনবিট যথাক্রমে- ফাঁসিয়াখালী সদর বিট, ডুলাহাজারা বিট, নলবিলা বিট কাম চেক স্টেশন, কাকারা বিট ও মানিকপুর বিট কাম চেক স্টেশন। এসব বিটের আওতায় মোট বনভূমির পরিমাণ ১৩৪৪৪.৫৪ একর। যার মধ্যে ১ হাজার ৯৪৮ জনের দখলে ৫৫৪ দশমিক ৮১ একর বনভূমি। কিন্তু গত ১ বছরে যে হারে বনবিভাগের পাহাড় সাবাড় ও দখল হয়েছে, তা নিরুপন করলে বেদখলের পরিমাণ বনবিভাগের তথ্যের চেয়ে অন্তত দিগুণ বেশি। অনুরূপভাবে, চট্টগ্রাম দক্ষিণের ৩টি ও মাতামুহুরির ১টি বনবিটের বনভূমির সিংহভাগ বেদখল হয়েছে।একাধিক পরিবেশসচেতন স্থানীয় ব্যক্তি নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, টাকা পেলে বনকর্তারা চোখে টিনের চশমা পরেন। গাছ কাটার খবর দিলেও চুপচাপ থাকতে দেখা যায় তাদের। নাকের ডগায় সব ঘটলেও তারা যেন বধির, অন্ধ। তারা আরও জানান, প্রভাবশালীদের চাপে বন কর্মকর্তাদের তেমন করারও কিছুই থাকে না। তাই তারাও ¯্রােতের প্রতিকূলে গা না ভাসিয়ে সেই সুযোগে কিছু উপরি আয় করে নেয়। কোন সৎ কর্মকর্তা যোগদান করলে এসব বনখেকো প্রভাবশালীদের সাথে শুরু হয় দা-কুমড়া সম্পর্ক। এতে তাকে বদলি করতে উঠেপড়ে লাগে প্রভাবশালীরা।
সামাজিক বনায়নের সুবিধাভোগী কয়েকজন স্থানীয় বলেন, স্থানীয় বনবিট শক্ত অবস্থানে থাকলে বনখেকোরা এভাবে বন উজাড় করতে পারতো না। কিছু গাছ ব্যবসায়ীর সাথে বন কর্মকর্তাদের অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠার কারণে বনাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। প্রতিরাতে ট্রাকে ট্রাকে বনের গাছ পাচার হচ্ছে। বিকিকিনি হচ্ছে পাহাড়কাটা মাটি ও বালি। প্রশাসন শক্ত অবস্থানে না যাওয়ায় বনের গাছ লুটেরার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে বনাঞ্চল বিরানভূমিতে পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না।
অভিযোগ রয়েছে, বনবিভাগ নিজেদের জবাবদিহিতা থেকে রক্ষা পেতে পাহাড় ও গাছ কাটা নিয়ে হাতেগোনা কয়েকটি মামলা করলেও সেই মামলায় প্রভাবশালীদের আসামি করা হয় না ভয়ে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পাহাড় কাটার সংবাদ পাওয়া মাত্রই আমি বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজ জামান ছুটে যাই। কয়েকবার একসাথেও গিয়েছি আমরা। অভিযানে ইতিপূর্বে স্কেভেটরসহ পাহাড় ও মাটি কাটার বেশকিছু সরঞ্জাম জব্দ করেছি।’