ঢাকাMonday , 11 December 2023
  1. অগ্নিকান্ড
  2. অনুষ্ঠান
  3. অপরাধ
  4. অবৈধ বালু উত্তোলন
  5. অভিনন্দন
  6. অভিযোগ
  7. অর্থনীতি
  8. আইন ও বিচার
  9. আওয়ামী লীগ
  10. আওয়ামী লীগে
  11. আক্রান্ত
  12. আটক
  13. আত্মহত্যা
  14. আদালত
  15. আনন্দ মিছিল
আজকের সর্বশেষ সবখবর

লামায় খালের অনিন্দ্য সৌন্দর্যও হৃদয়গ্রাহী

Link Copied!

লামায় খালের অনিন্দ্য সৌন্দর্যও হৃদয়গ্রাহী

মোঃমোরশেদ আলম চৌধুরী বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রূপের রাণী লামা উপজেলা। লামা উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা রূপসীপাড়া ইউনিয়ন। শুধু নামেই রূপসীপাড়া নয়, অনিন্দ্য সৌন্দর্যও হৃদয়গ্রাহী। লামা উপজেলা শহর হতে সাড়ে ৯ কিলোমিটার পূর্ব দিবে অবস্থিত ইউনিয়নের একমাত্র বাজার। পিচঢালা পাঁকা পথটিতে যে কোন গাড়িতে করে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। লামা খালের সৌন্দর্য দেখতে রূপসীপাড়া বাজার হতে ছোট ছোট মেশিন চালিত নৌকাই একমাত্র ভরসা। সেই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে বেরিয়ে পড়লাম।

অনিন্দ্য সুন্দর “লামা খালের মাছকুম” ভ্রমণে লামা বাজার হতে সকাল সাড়ে ৬টায় পৌঁছে গেলাম রূপসীপাড়া বাজারে। ছোট বাজারটিতে নাস্তা শেষ করে লামা খালের মাছকুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাজার থেকে নদী পথে ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে আরো ১২ কিলোমিটার পূর্বে নাইক্ষ্যংমুখ বাজার ও চুমপুং হেডম্যান পাড়া পর্যন্ত নৌকায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে গেলে ৫/৬ কিলোমিটারের বেশী যাওয়া যায়না। তখন বাকী পথ হেঁটে যেতে হয়। অক্টোবর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত সময়টায় নদীতে পানি থাকার কারণে ভ্রমণে যাওয়ার ভালো সময়। অপরদিকে রূপসীপাড়া বাজার হতে মংপ্রু পাড়া পর্যন্ত সদ্য নির্মিত সড়কে ৪ কিলোমিটার রাস্তা মোটর সাইকেল বা জীপে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

নৌকার মাঝি মোঃ শফিক আর স্থানীয় একজন ব্যবসায়ীকে মোঃ রফিক ভাইকে গাইড হিসেবে সাথে নিয়ে যাত্রা শুরু। সাথে নিলাম শুকনো খাবার ও পানি। রূপসীপাড়া বাজার জায়গাটা মোটামুটি পরিচিত হলেও গুগল ম্যাপে বাজারটা পাওয়া গেলো না। তবে লামা-রূপসীপাড়া সড়কটি গুগল ম্যাপে রয়েছে। রূপসীপাড়া বাজার গুগল ম্যাপে না থাকলে বাজারের একটি রেস্টুরেন্ট ‘হোটেল মারুপ’ ম্যাপে রয়েছে।

যাত্রা শুরু। আমি, নৌকার মাঝি আর বন্ধুবর ব্যবসায়ী মোঃ রফিক তিনজন খুব সকালে নৌকায় করে লামা খাল দিয়ে রওনা করলাম। আকাশ খুব পরিস্কার। চকচকে সূর্যের আলো চাপিয়ে গেছে চারদিক। কাউকে গন্তব্যের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে হয়নি কারণ মাঝি ও গাইড রফিক ভাইয়ের সব চেনা। সবেমাত্র দিন শুরু হওয়ায় কিছু কিছু গ্রামের বধূরা বাড়ির জিনিসপত্র ধৌঁয়ার জন্য খালের পাড়ে এসেছে। নৌকা তাদের কাছাকাছি যেতেই সবাইকে শাড়ির আচঁল মুখে টেনে ঘোমটা করতে দেখা গেল।

নৌকার ধাক্কায় জ্বলের ছলছল শব্দে অন্যরকম এক মুহুর্তের অনুভব হচ্ছিল। খালের দুই পাড়ে ছোট ছোট পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের কয়েকটি গ্রাম দেখা গেল। লোকালয়, সবুজ ধানক্ষেত, ফসলের মাঠ আর কাছাকাছি আবছা পাহাড়। অসংখ্য পাখির দেখা পেলাম। অনেক বাঙ্গালী জীবন ও জীবিকার কারণে পাহাড়ে বসবাস করতে শুরু করেছে। যতই পাহাড়ের গভীরে যাচ্ছিলাম ততই মার্মা, ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজনের দেখা মিলল। নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পাড়ারও দেখা মিলল। লক্ষ্য উচুঁ সবুজ পাহাড়ে আমরা মিশে যাবো। দু’পাশে ক্ষেত আর সবজি বাগান আমাদের জন্য আরেক সবুজের বিছানা পেতে রেখেছে। আমরা স্বর্গীয় পথে এগোতে এগোতে প্রায় দুইঘন্টা নৌকায় চড়ে নাইক্ষ্যংমুখ বাজারে পৌঁছালাম। এই ১২ কিলোমিটার নৌ-পথ আসতে লামা খালের অনিন্দ্য সৌন্দর্য দেখতে পেলাম। সামনে আর দোকানপাট নেই। তাই পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়ার আগে সেখানের একটা দোকানে খাবারের অর্ডার করলাম।

সামান্য বিশ্রাম ও খাবার সাথে নিয়ে আবারো যাত্রা শুরু। আরো ২ কিলোমিটার নৌকায় চড়ে চুমপুং হেডম্যান পাড়ায় পৌঁছালাম। খালের পানি কমে যাওয়ায় আর নৌকায় যাওয়ার সুযোগ নেই। সেখানেই নেমে গেলাম। স্রোতের বিপরীতে পাহাড়ের ভিতরে খালের সামান্য পানিতে হাঁটতে লাগলাম। এবার লক্ষ্যস্থান “লামা খালের মাছকুম” যাওয়া। মাছকুম হল একটি নদী বা খালের মূল অস্তিত্ব। শুষ্ক মৌসুমে পুরো নদী শুকিয়ে গেলেও মাছকুমে পানি থাকে। প্রতিটি নদী বা খালের উৎপত্তি স্থলের কিছুটা নিচে এই মাছকুমের সৃষ্টি হয়ে থাকে। পাহাড়ের উচুঁতে কিছু লোকালয় পেলাম, উপজাতি ম্রো সম্প্রদায় থাকে। পাহাড় ঘিরেই তাদের জীবন-জীবিকা। তারা ঝিরির পানি পরিশোধন করেই পান করে। প্রাকৃতিক পদ্ধতির ফিল্টারিংয়ের কিছু পদ্ধতিও আমরা দেখতে পেলাম।

নদীপথের ঠান্ডা পানিতে হাঁটতে হাঁটতে পুরো শরীরে একটা ঠান্ডা প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ছিল। বড় বড় পাথরের দেখা পাচ্ছিলাম। দুর্গম আকা-বাঁকা পথে এগোতে এগোতে আরো ৪ কিলোমিটার হেঁটে বেলা ১১টায় মাছকুমে পৌঁছে গেলাম। এক পর্যায়ে পেয়ে গেলাম মাছকুমের। ঘনবৃক্ষ ও গিরিখাত হওয়ায় দিনের সূর্যের আলো সবেমাত্র তাপ ছড়ানো শুরু করেছে। কিন্তু জায়গাটি খুবই শীতল। পাথরের প্রশস্ত পাহাড়ের উচ্চতা বেয়ে ধেয়ে আসছে পানির ঢল। দৃষ্টিনন্দন মাছকুম। পাহাড় বেয়ে উপরে উঠলে বিশাল ছাদ। দুর্দান্ত জায়গা। বিশাল বিশাল পাথর ধাপে ধাপে সাজানো। ছলছল ছন্দে স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তার উপরের দিকে ছোট ছোট বেশ কয়েকটা স্তর বেয়ে ধেয়ে আসছে জলস্রোত। প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ ও গড়ে ৩০ ফুট প্রশস্ত মাছকুমটি। দু’পাশে সরু গুহা, তার উপর থেকে ধীর গতিতে আসছে পানি। এই জায়গায় সাঁতরে যেতে হয়। ঠান্ডা হিমশীতল পানি। এ্যাডভেঞ্চার মানসিকতা না থাকলে যাওয়া অসম্ভব। চুমপুং পাড়া হতে কয়েকজন স্থানীয় মুরুং যুবক আমাদের সাথে গিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছিলেন, এই কুমে বড় বড় মাছ রয়েছে। তারা অনেকে এই কুমকে দেবতার কুম বলে জানে। কল্যাণের বিশ্বাসে তারা এখানে সকাল-সন্ধ্যা মোমবাতি জ্বালায়। তারা এই কুমে মাছ আছে জেনেও অমঙ্গল হবে ভেবে মাছ ধরতে আসেনা।

মাছকুম থেকে আরো একটা বড় পাহাড় ট্রেকিং করে উপরে উঠতে হলো আমাদের। সেই পাহাড়ে হেঁটে হেঁটে আবার নামলাম ঝিরি পথে। এই পথটা অনিন্দ্য সুন্দর। বর্ণনায় করা যায় না। দুই পাশে উঁচু পাহাড়, একটু পর পর বড় বড় পাথর। আর পুরাটা হাটার পথ শক্ত পাথরে বাঁধাই করা। তার ওপর দিয়ে ঝিরি ঝিরি পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কলকল শব্দ। এই পথে হাঁটতে অনুভব হচ্ছিল অপার্থিব সুখ।

অনিন্দ্য সুন্দর এই পথ পাড়ি দিয়ে সামনে আরো ৬ কিলোমিটার গেলে দেখা মিলবে লামা খালের উৎপত্তিস্থল ‘ব্যাং ঝিরি মুখ কমলা বাগানের’। এখানেই ব্যাং ঝিরি ও ২৬ কিলো হতে বয়ে আসা ছোট ঝিরিটি মিলিত হয়ে লামা খালে জন্ম হয়েছে। অনেকে লামা খালের উৎপত্তিস্থান হিসাবে ২৬ কিলো মিঠু পাড়া