শ্রমিক সংকটে পড়ছে কৃষক হাজার টাকা মজুরি
কামরুল ইসলাম
প্রচণ্ড তাপদাহে ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে কিছু এলাকায় কাঙ্ক্ষিত ফলন হয়নি। তার সাথে কিছু এলাকায় আপদ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ধানের নেক ব্লাস্ট রোগ।
যেকারণে ধান চিটা হয়ে গেছে। ধান কাটার মৌসুমে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর মত চলছে শ্রমিক সংকট। দিনে হাজার টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক মিলছে না অনেক জায়গায়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। দুই-একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া সেই আহ্বানেও তেমন সাড়া পাচ্ছেন না কৃষকরা।
আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামের কৃষক মো. মহিউদ্দিন গণমাধ্যম কে জানান, ধান বেশ ভালো হয়েছে। তবে ধান ঘরে তোলার যে খরচ যে হারে বেড়ে গেছে তাতে লাভের মুখ দেখবেন কিনা সন্দেহ। বর্তমানে একজন শ্রমিককে ভাত ও নাস্তা খাওয়ালে দৈনিক এক হাজার টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। আর ভাত ছাড়া ১২০০ টাকা।
সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ চরতি গ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম জানান, তিনি ৭ কানি জমিতে ধান করেছেন। কিন্তু শ্রমিক সংকটে এখনো প্রায় ৫ কানি জমির ধান কাটতে পারেননি। একসময় রোহিঙ্গারা ভাসমান শ্রমিক হিসেবে এখানে কাজ করতে আসতো। বাজারের এক পাশে তারা বসতো। সেখান থেকে দরদাম করে কিছুটা কম দামে শ্রমিক পাওয়া যেত। এখন হাজার টাকার নিচে কোন শ্রমিক মিলছে না।
ফটিকছড়ি উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া এলাকার কৃষক রেহান উদ্দিন জানান, তিনি তিন কানি জমির চাষ করেছেন। নেক ব্লাস্ট রোগে তার ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। একই এলাকার আরেক কৃষক নুর উদ্দিন জানান, প্রতিবছর তিনি দুই কানি জমিতে বোরো চাষ করে ২০০ আড়ি ধান পান। এবার ধান পেয়েছেন অর্ধেক। কিন্তু ধান ঘরে তুলতে গিয়ে শ্রমিক সংকট এবং উচ্চ মজুরির কারণে খরচ হয়েছে বেশি।
একাধিক কৃষক জানান, কালবৈশাখী চোখ রাঙাচ্ছে। ঝড়ো হাওয়া সহ বৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টি হলে তা কৃষকের জন্য পাকা ধানে মই দেয়ার মতই হবে। পাকা ধান দ্রুত ঘরে তুলতে না পারলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। রাউজান ৭ নং সদর ইউনিয়নের কৃষক ইসহাক ইসলাম জানান, তিনি ২৫ কানি জমিতে বোরো চাষ করেছেন। ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। কয়েকদিন আগে শিলা বৃষ্টিতে বেশ ক্ষতি হয়েছে। পাকা ধান কাটার জন্য শ্রমিককে দৈনিক হাজার টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। যেকারণে উৎপাদিত ধান থেকে লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, শুরু হয়েছে ধান কাটা। তবে তীব্র গরমে ধান কাটতে নাভিশ্বাস উঠছে। কাল বৈশাখীর আশঙ্কায় চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। ঝড় বৃষ্টি হলে পাকাধানে মই পড়বে। শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নের কৃষক আহম্মদ মিয়া বলেন, ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও বেতন বেশি। খুব বিপদে পড়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ধান কাটা, মাড়াই, পরিষ্কার ও গোলায় তোলা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ধান এখন পরিপক্ক হয়ে গেছে, বৃষ্টি খুব বেশি ক্ষতি করবে না। তবে ভারী বৃষ্টি বা শিলাবৃষ্টি হলে ক্ষতি হবে। ঝড়ের পূর্বাভাস থাকায় ক্ষেতের ধান ৮০ শতাংশ পেকে গেলে কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেন তিনি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর গনমাধ্যম কে বলেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের নির্দেশনা আছে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর। যুবলীগের পক্ষ থেকে ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং এলাকায় কৃষকের ধান কেটে দেয়া হবে। ধান কাটার কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন গণমাধ্যম কে জানান, ইতোমধ্যে তাদের নেতাকর্মীরা লোহাগাড়ার চুনতিতে, সাতকানিয়ার পুরানগড় এবং পটিয়ার ধলঘাটে অসহায় কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে। তবে ঈদ এবং চট্টগ্রাম -৮ আসনের নির্বাচনের কারণে তারা এতদিন কৃষকের ধান কাটার জন্য সেভাবে মাঠে নামতে না পারলেও এখন জোর প্রস্তুতি নিয়ে নামছেন। বিশেষ করে কোন কোন এলাকায় অসহায় কৃষকের পাকা ধান আছে তার খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। কৃষকের ধান কেটে তাদের ঘরে তুলে দেয়া হবে।