সিডিএ মার্কেটের সামনে অনুসারীদের নিয়ে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ডাকাতি
কামরুল ইসলাম চট্টগ্রাম
তিনি নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজার সিডিএ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতাদের সাথে তার ছবিও শোভা পায় ফেসবুকে। একরামুল আলম নামে এ বক্তি গত রবিবার (৯ জুলাই) দিনে দুপুরে সিডিএ মার্কেটের সামনে অনুসারীদের নিয়ে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ডাকাতি করে।।
ডাকাতির পর নিজের ফেসবুকে ব্যবসায়ীর টাকা ডাকাতির ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ডাকাতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের প্রতি আহ্বানও জানান। ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ’ নাম দিয়ে সংগঠনটিকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে একরামুল রিয়াজ উদ্দিন বাজারে ছিনতাই-চাঁদাবাজিতে যুক্ত। সর্বশেষ গত রবিবার দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ডাকাতি করেন একরামুল।
কোতোয়ালি থানা পুলিশ গত সোমবার ডাকাতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে একরামুলসহ তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া ডাকাতির টাকার সাত লাখ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করে। এরমধ্যে ছয় লাখ ৭০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে একরামুলের কাছে।
একরামুল আলম (৩৭) পটিয়ার দেউরডেঙ্গা গ্রামের মৃত জাফর আহমদের ছেলে। গ্রেপ্তার তিন সহযোগী হলেন, মীরসরাইয়ের পূর্ব মায়ানি গ্রামের শাহ আলমের ছেলে সাহেদ হোসেন মনা (২৪), সাতকানিয়ার গোয়াজর পাড়ার মো. ইউনুছের ছেলে ইয়াছিন প্রকাশ এরফান প্রকাশ সাব্বির ও কুমিল্লার মুরাদনগরের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিউল হোসেন প্রকাশ ইকবাল হোসেন (২৩)।
নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পুরো ডাকাতির ঘটনার পরিকল্পনা করেন একরামুল ও সাহেদ হোসেন মনা। লুণ্ঠিত ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে সাত লাখ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
ডাকাতিতে অংশ নেয় ১৪ জন : ব্যবসায়ীরা জানান সিডিএ মার্কেটের তিন তলায় একটি ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের’ কার্যালয়ে নিয়মিত বসতেন একরামুল। একই নামে সদরঘাট ট্রাক স্ট্যান্ডের কাছেও একটি সংগঠন রয়েছে। আক্তার মাস্টার নামে এক ব্যক্তি নাম সর্বস্ব সংগঠনটি গড়ে তোলেন। নানা অভিযোগে অভিযুক্ত আক্তার মারা যাবার পর সংগঠনটির নেতৃত্বে আসেন একরামুল।
গত এক বছর আগে রিয়াজ উদ্দিন বাজার প্যারামাউন্ট সিটির ছয় এবং সাত তলায় দখলের ঘটনা ঘটে। ওই দখল-বেদখলের ঘটনায় একরামুল ও একাধিক মামলার আসামি জাহেদের অনুসারীরা অংশ নেয়। দখলের ঘটনার পর থেকে হোটেল প্যারামাউন্টে দুটি কক্ষে তারা নিয়মিত থাকে। ওই হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে ডাকাতির টাকা জমা রেখেছিল একরামুল। রিয়াজ উদ্দিন বাজারের কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে তাদের ব্যবহার করে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছায়া থাকায় একরামুল কিংবা জাহেদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস করে না।
রবিবারের ডাকাতির ঘটনায় একরামুলের নেতৃত্বে অংশ নেয় ১৪ অনুসারী। এরমধ্যে অন্যতম হলো- জলসা মার্কেটের চোরাই মোবাইল ব্যবসায়ী মিরাজ, ইকবাল, ইদু, আনোয়ার, ইরফান। লুণ্ঠিত ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ৪০ হাজার টাকা নেয় মনা। মনা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। লুণ্ঠিত ছয় লাখ ৭০ হাজার টাকা হোটেল প্যারামাউন্টের অভ্যর্থনা কক্ষে জমা রাখে একরাম। বাকি দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায় মিরাজ।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, ডাকাতির ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ দেখে মনাকে শনাক্ত করা হয়। সোমবার বিকেলে বায়েজিদের রউফাবাদ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার ঘরের আলমারিতে লুণ্ঠিত ৪০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। প্রাথামিক জিজ্ঞাসাবাদে মনা ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের নাম জানায়। পরে মাদারবাড়ি রাবেয়া ওয়ার্কশপের সামনে থেকে একরামুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। একরামুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্যারামাউন্ট হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে ছয় লাখ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। টানা অভিযানে গতকাল (মঙ্গলবার) ভোরে কর্ণফুলী চরলক্ষ্যা এলাকা থেকে ইয়াছিন ও ইকবাল হোসেন ওরফে রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসি জানান, ডাকাতির ঘটনায় নেপথ্যে নেতৃস্থানীয় লোকজন জড়িত রয়েছে। ঘটনার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।