সৈয়দপুরে সিটি ব্যাংকের প্রায় অর্ধকোটি টাকার গ্রাহকের গরমিল আতঙ্কে গ্রাহকরা
সিটি ব্যাংকের নীলফামারীর সৈয়দপুর শাখায় গ্রাহকের আরও অর্ধ কোটি টাকার গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার দুপুরে গ্রাহক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এ ঘটনায় আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার এক গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে ৩৪ লাখ টাকা উধাওয়ের ঘটনা ঘটে। এ খবর আজকের পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে আজ (রোববার) গ্রাহকেরা ব্যাংকে ছুটে যান। এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন গ্রাহকের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আমানতের গরমিল পান।
খবর পেয়ে ব্যাংকে ছুটে আসেন সংবাদকর্মীরা। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর বেলা সাড়ে চারটার পর ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এ সময় ভুক্তভোগী মহিলা গ্রাহক ও তাঁর স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া টাকা সমন্বয় করার কথা বললেও তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ দেখা যায়।
এ বিষয়ে সিটি ব্যাংক সৈয়দপুর শাখার ব্যবস্থাপক সুলতান মাহবুব খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ (বৃহস্পতিবার) ঘটনার পর আজ রোববার ব্যাংকে গ্রাহকেরা তাঁদের আমানতের অর্থ সঠিক আছে কিনা খোঁজ নিতে এসেছেন। এর মধ্যে ২ / ৩ জন গ্রাহকের অভিযোগ পাওয়ায় তা যাচাই করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহকের আমানতের টাকা উধাও হওয়ার ঘটনাটি তদন্তে ঢাকা ও রংপুর থেকে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তবে গ্রাহকদের আমানতের টাকা উত্তোলন না করলে অবশ্যই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দিতে বাধ্য।’ তাই গ্রাহকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ব্যাংকে রাখা গ্রাহকের ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ, পালানোর সময় কর্মকর্তা আটক
গত বৃহস্পতিবার সিটি ব্যাংকের সৈয়দপুর শাখার গ্রাহক শরিফা বেগম নামে এক নারী তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে গিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা না থাকার বিষয়টি জানতে পারেন। তাৎক্ষণিক তিনি বিষয়টি ব্যাংক ব্যবস্থাপককে লিখিতভাবে জানান।
এ সময় তিনি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ব্যাংকের কর্মকর্তা ইসতেকুর রহমান সেতুকে আটক করেন। পরে রাত ৯টার দিকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক টাকা ফেরত দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়ার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ভুক্তভোগী শরিফা বেগম সৈয়দপুর শহরের হাতিখানা বানিয়াপাড়া এলাকার মোহাম্মদ দোলনের স্ত্রী এবং শহরের বিশিষ্ট চাল ব্যবসায়ী মৃত ইদ্রিস আলীর মেয়ে।
শরিফা বেগম জানান, সিটি ব্যাংকের সৈয়দপুর শাখায় ৩০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট (এফডিআর) অর্থাৎ স্থায়ী আমানত হিসাব খোলেন। এরপর চলতি বছরে ব্যাংক থেকে নেওয়া স্টেটমেন্ট অনুযায়ী ওই হিসাব নম্বরের বিপরীতে মোট ৩৩ লাখ ২৩ হাজার ২৩০ টাকা ৫৭ পয়সা জমা আছে তাঁর। বৃহস্পতিবার পারিবারিক প্রয়োজনে এফডিআর থেকে টাকা তুলতে গেলে জানতে পারেন অ্যাকাউন্টে কোন টাকা নেই।
এ ঘটনায় জড়িত ব্যাংকের ঋণ শাখার কর্মকর্তা ইসতেকুর ইসলাম সেতু টাকা তুলে নেওয়ার কথা উপস্থিত সংবাদকর্মী ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ভুল করেছি। এতে ব্যাংকের কোনো ত্রুটি নেই। আমিই টাকাটা কৌশলে সরিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। কয়েকজন মিলে এ অপকর্ম করলেও দায় আমার ঘাড়েই চাপানো হলো। যিনি মূল খলনায়ক তিনি পার পেয়ে গেলেন।’