শনিবার , ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

চট্টগ্রামের আউটার রিং রোড ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

চট্টগ্রামের আউটার রিং রোড ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে

কামরুল ইসলাম চট্টগ্রাম

প্রায় পৌনে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড। উদ্বোধন হওয়ার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠছে দৃষ্টিনন্দন এই সড়কটি। ঘটছে ছিনতাই, দুর্ঘটনা। সড়কটি ঘিরে গড়ে উঠছে অবৈধ ওয়ার্কশপ। হত্যার পর মৃতদেহ ফেলতেও ব্যবহার হচ্ছে সড়কটি। চট্টগ্রাম বন্দরের শত শত কোটি টাকার পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের প্রধান মাধ্যম এ সড়কে সড়কবাতি না থাকায় নির্জন রাত হলেই নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সাগরপাড়ে নির্মিত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটিতে রাখা হয়নি স্থানীয় লোকজন পারাপারের ব্যবস্থাও।
গত বছরের জুলাই মাসে রিং রোডের পাশে ফেলা হয়েছিল শাহ আলম নামের এক যুবকের মৃতদেহ। এর আগে আলমগীর নামে এক ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়েছিল এই সড়কের পাশে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সাগর পাড় ঘিরে নগরীতে প্রায় ১৫ লাখ বাসিন্দা রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার জেলে পরিবার রয়েছে। যাদেরকে প্রতিদিন জীবন-জীবিকার তাগিদে সিটি আউটার রিং রোড পার হতে হয়। কিন্তু সড়ক নির্মাণ পরিকল্পনায় স্থানীয় মানুষের পারাপারের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সড়কটিতে রাখা হয়নি কোনো সার্ভিস লেনও। এছাড়া এ সড়ক ঘিরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক গ্যারেজ। সড়কের একপাশ দখল করে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লং ভেহিক্যাল রাখা হচ্ছে। গাড়ির গতি কমাতে গতিরোধক না থাকায় দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানী। সন্ধ্যার পর পুরো এলাকায় ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসায় এই সড়কে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের এই সড়কে সৈকত, বন্দর ও হালিশহরমুখী হাজারো কাভার্ডভ্যান, লং ভেহিক্যাল, ট্রাকসহ নানা যানবাহন চলাচল করে প্রতিদিন। এ সুযোগে সড়কটির পাশে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক অবৈধ গ্যারেজ ও ভারী যানবাহনের ডিপো। জানতে চাইলে সিএমপির ট্রাফিক পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার তারেক আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লং ভেহিক্যাল যাতায়াত করে। অথচ এসব ভারী যানবাহনের কোনো টার্মিনাল নেই। বন্দরে প্রবেশের জন্য অপেক্ষমান পণ্যবাহী গাড়ি সড়কে পার্কিং করে রাখে। তাদেরকে এক সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে অন্য সড়কে গিয়ে পার্কিং করে।
তিনি বলেন, সড়ক দখলমুক্ত রাখতে কখনো মামলা দেওয়া হয়, কখনো গাড়ি জব্দ করা হয়। কিন্তু তারাও যাবে কোথায়। স্থায়ী ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ না হলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। বিয়ষটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলা হয়েছে। টার্মিনাল হলে সড়কে আর গাড়ি থাকবে না।
ওই এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ সামিউল জানান, সন্ধ্যা হলেই সড়কটি অন্ধকার নেমে আসে। সড়কটিতে খুব দ্রুত বেগে গাড়ি চলাচল করে। কয়েকদিন আগে যে সার্জেন্ট মারা গেছেন তাকেও দ্রæত বেগে আসা প্রাইভেটকার ধাক্কা দিয়েছিল।
চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোডে সড়কবাতি লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, শুরুতে প্রকল্পের কন্সালট্যান্টরা মনে করেছিলেন এটি হাইওয়ে সড়ক হবে। এখানে সড়কবাতির প্রয়োজন নেই। তাদেরকে আমরা বলেছি সড়কটি পর্যটন এলাকা নির্ভর এবং শহরের মধ্যেই। এ সড়কে সড়কবাতি লাগবেই।
হাসান বিন শামস বলেন, সড়কটির কাজ শেষ হলেও টানেলের ইন্টারসেকশন সড়কের কাজ করতে চতুর্থ দফা সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই সংশোধনী প্রস্তাবে সড়কবাতির বিষয়টি যোগ করা হয়েছে। এটি দ্রুত গতির সড়ক হওয়ায় এখানে ফুটওভার ব্রিজ কিংবা ক্রসিং দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে গাড়ির গতি কমাতে গতিরোধক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
সড়কের পাশে গ্যারেজ গড়ে উঠা প্রসঙ্গে প্রকৌশলী হাসান জানান, রিং রোডের পাশে টার্মিনাল কিংবা গ্যারেজ নির্মাণের কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি। সড়কটি পুরোদমে চালু হলে এসব গ্যারেজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সিডিএ সুত্র জানায়, নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ওপর আউটার রিং রোড নির্মাণের জন্য ২০০৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা। দুই বছর যাচাই কাজ শেষ করে এ প্রকল্পের অর্থের যোগান দিতে সম্মত হয়। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাইকার চুক্তি হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরে দুই দফা সংশোধন করে ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৬৭৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার দেয় ২ হাজার ৩২ কোটি ৪০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। জাইকা অর্থায়ন করে ৬৪৩ কোটি টাকা। আউটার রিং রোড নির্মাণে যৌথভাবে কাজ করে বাংলাদেশী নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও ভারতীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কেএনআর লিমিটেড।