মঙ্গলবার , ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পৃথক ঘটনায় স্কুলছাত্রীসহ প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পৃথক ঘটনায় স্কুলছাত্রীসহ প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার

মোঃ সাকিব ইসলাম, রংপুর

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলায় পৃথক ঘটনায় ষষ্ঠ শ্রেণীর ১ স্কুলছাত্রী ও ১ প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের ঘটনায় মিঠাপুকুর থানায় ধর্ষণ মামলা হলে একজনকে গ্রেফতার করেছে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ। অপরদিকে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।

শনিবার (৩ জুন) সকালে উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের বাহির লোহনী গ্রামে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ওই নারী রানীপুকুর ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনায় বিষয়টি তার পরিবারের নজরে আসে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের লোহনী (বাহির লোহনী) গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী লাল মিয়া (নালু) ৫৮, একই গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া দুর সম্পর্কের নাতনি এক স্কুলছাত্রীকে ফুসলিয়ে নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে গিয়ে টাকার লোভ দেখিয়ে পূর্বের ন্যায় ধর্ষণ করার সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি বিষয়টি দেখতে পেয়ে অভিযুক্তকে আটকের চেষ্টা করলে অভিযুক্ত নালু মিয়া পালিয়ে যায়। পরে লোকজন জানাজানি হলে বিষয় নিয়ে মধ্যরাত অবধি আপোষ মিমাংসার চেষ্টা চলে। কিন্তু আপোষ মিমাংসা না-হওয়ায় রবিবার (৪ জুন) দুপুরে ভুক্তভোগী ওই স্কুলছাত্রী এবং তার পরিবার থানায় মামলা করতে আসেন।

স্থানীয়রা জানান, স্কুল ছাত্রীর বাবা একজন দিনমজুর (রাজমিস্ত্রী) আর মা স্থানীয় একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। টানাপোড়েনের সংসারে বেশিরভাগ সময়ে তারা বাড়িতে থাকেন না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে লালু মিয়া। এছাড়াও সে একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে থানায় মামলা রয়েছে।

গত প্রায় ২ মাস আগে তাকে মাদকসহ গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু কয়েকদিন আগে জেল থেকে জামিনে বের হন তিনি। কয়েকজনের দাবি-লালু মিয়া গ্রামে চোলাইমদ বিক্রি করে আর সেই মদ তৈরি করার জন্য গত ৮/৯ বছর আগে তার বউ থাকার পরেও আদিবাসী এক নারীকে বিয়ে করেছেন। উভয়মিলে একটি ভাড়া বাড়িতে থেকে তারা চোলাইমদ তৈরি করে বিক্রি করতেন।

অভিযুক্ত লালু মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী জানান, ওই মেয়ে প্রায়দিন আমাদের বাড়িতে আসতো তারা দূরসম্পর্কের দাদা-নাতনি হয়। সেই সুবাদে মেয়েটাকে আমার স্বামী বিভিন্ন কাপড়চোপড় ও টাকাপয়সা দিতেন কিন্তু আমরা কখনো সন্দেহ করিনি। ওই দিন আমি কাজে ব্যাস্ত ছিলাম তাই কখন কি হয়েছে বলতে পারবো না। পরে লোকমুখে ঘটনার বিষয়ে শুনছি কিন্তু আমার স্বামী সেদিন থেকেই বাড়িতে নেই।

স্কুলছাত্রীর স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন মেয়েটি তার ছোট বোনসহ লালু মিয়ার ভাড়া বাড়ির সামনের উঠোনে খেলাধুলা করছিলেন। এ সময় লালু ওই স্কুলছাত্রীকে পূর্বের ন্যায় ফুসলিয়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। বিকেল হতে হতে ঘটনাটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে মেয়েটার আচার-আচরণের পরিবর্তন দেখা যায়। পরে পারিবারিকভাবে আলোচনা করে থানায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেই।

অপরদিকে মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় (বুড়াপুকুর সংলগ্ন) এক প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গত শনিবার দিবাগত রাতে অভিযুক্ত শাহার মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জানা গেছে, প্রায় ৩/৪ বছর আগে ওই প্রতিবন্ধী নারী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কিন্তু সন্তান প্রসবের সময় শাররিক ঝুঁকির কারণে তার একটি পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। এরপর স্বামীর সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে বাবার বাড়িতেই থাকেন প্রতিবন্ধী নারী।

তার এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের পাশের বাড়ির দূরসম্পর্কের ভাই দুই সন্তানের জনক শাহার মিয়া কু-নজর দেন। একদিন কেউ বাড়িতে না থাকার সুযোগে শাহার মিয়া ওই প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করেন। এরপর ঘটনাটি মেয়ের বাবা জানতে পেরে থানায় মামলা করলে অভিযুক্ত শাহার মিয়াকে গ্রেফতার করেন পুলিশ।

রংপুর সহকারী পুলিশ সুপার ডি-সার্কেল (মিঠাপুকুর-পীরগঞ্জ) মোঃ আবু হাসান মিয়া বলেন, প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্কুলছাত্রীকে মিঠাপুকুর থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। অভিযুক্ত লাল মিয়াকে গ্রেফতারের জন্য জোর চেষ্টা চলছে।