শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কতৃপক্ষের কারণে অনিশ্চিত ৪৫ পরিক্ষার্থীর পরিক্ষা

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ২ মে, ২০২৩

রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কতৃপক্ষের কারণে অনিশ্চিত ৪৫ পরিক্ষার্থীর পরিক্ষা

কামরুল ইসলাম

কক্সবাজারের রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার কারণে ৪৫ ছাত্রছাত্রীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
খবর পেয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন ঘটনাস্থলে যান। এ সময় ওসি শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যায় ইউএনওসহ বৈঠক করে সমাধানের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানায়- বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে ফরম পূরণে ব্যাপক অনিয়ম, রেজিস্ট্রেশনে ভুলের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমরান, মারোয়ান, সরওয়ার কামাল ও সুপ্রিয়া দেবী জানান- করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ৮ম শ্রেণিতে তাদের রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। স্কুল খোলার পর প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার আশ্বাসে তাদের কাছ থেকে খরচ ও রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ টাকা নেন। ওইসময় বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তারা নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে তারা নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন করার জন্য অনুরোধ জানালে প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী তাদের ৮ম ও ৯ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন একসাথে করে দেয়ার আশ্বাস দেন। পরে লেখাপড়া করে তারা দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন।
আগামী রবিবার তাদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশপত্র দিতে পারেনি। ফলে তাদের এসএসসি পরীক্ষা দেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমনকি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিতে না পারলে তাদের আবারো অষ্টম শ্রেণি থেকে পড়ালেখা শুরু করতে হবে। অর্থাৎ তাদের শিক্ষাজীবন ৩/৪ বছর পিছিয়ে যাবে। তাদের মতো অভিভাবকরাও এটা কিছুতে মেনে নিতে পারছে না।
এ ঘটনায় তারা গত ২৫ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোন সমাধানের লক্ষণ তারা দেখছে না।
এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছ উদ্দিন জানান- তিনি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন কার্ডে তার বিভাগ উল্লেখ করা হয়েছে বাণিজ্য। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে বারবার তাগদা দেয়া সত্ত্বেও তা সংশোধন করা হয়নি। এছাড়া একদিন পর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে, কিন্তু তার প্রবেশপত্র বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিতে পারছে না।
শিক্ষার্থীরা আরও জানিয়েছেন- নির্বাচনী পরীক্ষায় ৪টি বিষয়ে কৃতকার্য হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয়নি। কিন্তু ৮ বিষয়ে কৃতকার্য হতে পারেনি, এমন শিক্ষার্থীকে দেয়া হয়ে ফরম পূরণের সুযোগ। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে এভাবে চলছে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি।
এ নিয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফাহমিদা মুস্তফার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফাহমিদা মুস্তফা জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করা হচ্ছে। তিনি শিক্ষা বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে শুক্রবার রাত ৯ টায় বৈঠক থেকে জানান।
লিখিত অভিযোগ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে আরও জানা গেছে- দশম শ্রেণির ১৪৭ জন ছাত্রছাত্রী নির্বাচনী পরীক্ষা ২০২২ এ অংশ নেন। এরমধ্যে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি।নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে শাহরিয়াদ মো. সায়েফ, মো. রাশেদ খান, ফাহিম সরওয়ার, রাশেদুল ইসলাম ও লিমন শর্মা জানান- শারীরিক অসুস্থতা, অভিভাবকের মৃত্যু, পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাদের অনেকে নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেনি। কিন্তু সুযোগ দেয়া হলে তারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর আহমদকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। উল্টো ৮ বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকেও নিয়ম বহিভূতভাবে টাকা নিয়ে ফরম পূরণের অনুমতি দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর আহমদ জানান, সকল শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে পাশ করার উপযোগী শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনিয়ম ও ভুলের জন্য তিনি বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মফিজুল আলম ও অফিস সহকারী অনু বড়ুয়ার গাফিলতি ছিল বলে জানান।