হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি পতিত পানির অভাবে চিংড়ি ও ধান চাষ ব্যাহত
পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি :
খুলনার পাইকগাছায় পানির অভাবে চিংড়ি ও ধান আবাদযোগ্য হাজার-হাজার বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। পানির অভাবেজমি ফেটে চৌচির হওয়ায় চিংড়ি চাষি ও জমির মালিক হতাশ। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি বা পতিত রাখা যাবে না দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে হবে-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্দেশের পরও অনাবাদি ও পতিত পড়ে রয়েছে পাইকগাছার পুরাইকাটি বিলের প্রায় এক হাজার বিঘা জমি। পুরাইকাটি বিলে লবণপানি তুলতে না দেওয়ায় চিংড়ি চাষের আবাদযোগ্য প্রায় এক হাজার বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। আবার বিলে মিষ্টি পানির খাল বা পানির ব্যবস্থাও নেই। দুই বছর ধরে লবণপানি আর মিষ্টি পানির সঠিক কোনো নির্দশনা না থাকায় বিলে মৎস্য বা ধান আবাদ হচ্ছে না। এর ফলে চিংড়ি চাষি, ঘেরমালিক ও জমির মালিকরা অর্থনৈতিকভাবে চরম বিপর্যায় মুখে পড়েছেন। অনেকে ব্যাংক লোন শোধ করতে পারছে না কোনো ফসল না পাওয়ায় ধার দেনা করে চলছেন। এমন চিত্র উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও।
এ অবস্থায় চাষি ও জমির মালিকরা সঠিক সিদ্ধান্ত চান, যদি লবণপানি বন্ধ করা হয় তবে মিষ্টি পানির ব্যবস্থা ও ধান চাষের অনুকূল পরিবেশ সংশ্লিষ্টদের তৈরি করে দিতে হবে। উপজেলার পুরাইকাটি, আওড়, কাজিরবিল ও ধোড়ামারিবিল মিলে প্রায় ১৩শ বিঘা জমির মধ্যে ১২শ বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। লবণপানি তুলতে না দেওয়ায় চিংড়ি চাষ বন্ধ রয়েছে আর মিষ্টি পানি না পাওয়ায় কৃষকরা এসব জমিতে বোরো আবাদ করতে পারছেন না। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ, মৎস্য বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশাল এ জমির দিকে নজর দিচ্ছে না। বিলে মিষ্টি পানির কোনো খাল নেই।
খেতে বোরো চারা রোপণের পর এখন পানির অভাবে কৃষকের মাথায় হাত। সেচের পানি না পাওয়ায় চলতি বোরো ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। রোদে পুড়ে বিবর্ণ হয়েছে বোরো ধানের চারা। জমি চাষ, শ্রমিকের মজুরি, তেলের দাম বৃদ্ধি, সার ও কীটনাশকের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। পাইকগাছায় মৎস্য চাষি ঘের মালিকরা লবণ পানিতে চিংড়ি চাষ করতে চায়। অন্যদিকে উপজেলায় বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ লবণপানি তোলার বিপক্ষে, তারা
মিষ্টি পানিতে ধান চাষের পক্ষে। চিংড়ি খাত থেকে বিপল বৈদেশিক মুদ্রার বড় অংশ চিংড়ি থেকেই আসছে। তাছাড়া চিংড়ি – চাষ বন্ধ হলে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাঁকড়া মৎস্য ব্যবসায়ী -ও শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়বে। চাষি হাজী আব্দুস সামাদ মোড়ল বলেন, গত বছর ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করে ৫ মন ধান পাই। চাষ করতে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। – খরচের টাকা উঠেনি। উপকূলের লবণ পানির প্রভাবে ধান ভালো হচ্ছে না। ধান চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কৃষক জাহিদ হোসেন বলেন, বেশিভাগ জমি অনাবাদি পড়ে আছে। আবাদকৃত বোরো ধান ভালে হয়নি। বিলের প্রায় ১২শ বিঘা জমির মধ্যে একশত বিঘাও কম জমিতে বোরো আবাদ করা হলেও বিস্তীর্ণ জমি খালি পড়ে আছে।