হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তায়েফ সফরের ঘটনা,
হাফেজ মোঃ আসলাম,
নবুওত পাওয়ার পর নয় বৎসর পর্যন্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা মোকাররমায় তবলীগ করিতে থাকেন এবং কওমের হেদায়েত ও সংশোধনের জন্য চেষ্টা করিতে থাকেন। কিন্তু অল্পসংখ্যক লোক যাহারা মুসলমান হইয়াছিলেন আর কিছু সংখ্যক লোক যাহারা মুসলমান না হওয়া সত্ত্বেও হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহায্য করিতেছিলেন, তাহারা ছাড়া মক্কার অধিকাংশ কাফের হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁহার সাহাবীগণকে সর্বপ্রকারে কষ্ট দিতেছিল। তাহারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করিত এবং যত রকম নির্যাতন সম্ভব উহা করিতে ত্রুটি করিত না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আবু তালেব সেই সকল হৃদয়বান লোকদের মধ্যে ছিলেন যাহারা মুসলমান না হওয়া সত্ত্বেও হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা করিতেন। নবুওয়তের দশম বৎসর যখন আবু তালেবেরও ইন্তেকাল হইয়া গেল, তখন কাফেরদের জন্য সর্বদিক
হইতে আরও প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারে বাধা প্রদান ও মুসলমানদের উপর নির্যাতনের সুযোগ মিলিয়া গেল। হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই উদ্দেশ্যে তায়েফ তশরীফ লইয়া গেলেন যে, সেখানে ছকীফ গোত্রের লোকসংখ্যা অনেক; যদি এই গোত্র মুসলমান হইয়া যায়, তবে মুসলমানরা এই সকল নির্যাতন হইতে নাজাত পাইবে এবং দ্বীন-প্রচারের বুনিয়াদ কায়েম হইয়া যাইবে। সেখানে পৌঁছিয়া গোত্রের শীর্ষস্থানীয় তিনজন নেতার সহিত কথা বলিলেন, তাহাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে দাওয়াত দিলেন এবং আল্লাহর রাসূলের অর্থাৎ নিজের সাহায্যের প্রতি আহ্বান জানাইলেন। কিন্তু তাহারা দ্বীনের কথা কবুল করা অথবা কমপক্ষে আরবের প্রসিদ্ধ মেহমানদারীর প্রতি খেয়াল করিয়া একজন নবাগত মেহমানের খাতির-যত্ন করার পরিবর্তে পরিষ্কার জবাব দিয়া দিল এবং অত্যন্ত রুক্ষ ও অভদ্র ব্যবহার করিল। তাহারা ইহাও সহ্য করিল না যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে অবস্থান করিবেন। যাহাদেরকে সর্দার ও ভদ্র মনে করিয়া কথা বলিয়াছিলেন যে, সম্ভবত তাহারা সম্ভ্রান্ত হইবে এবং ভদ্র ভাষায় কথা বলিবে। তাহাদের মধ্য হইতে একজন বলিল, ওহ-হো, তোমাকেই আল্লাহ নবী বানাইয়া পাঠাইয়াছেন? দ্বিতীয়জন বলিল, আল্লাহ তায়ালা কি তোমাকে ছাড়া আর কাহাকেও পান নাই, যাহাকে রাসূল বানাইয়া পাঠাইতেন? তৃতীয় জন বলিল, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলিব না, কেননা, সত্যই যদি তুমি নবী হইয়া থাক যেমন তুমি দাবী করিতেছ তবে তোমার কথা অমান্য করিলে বিপদ হইবে। আর যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তবে আমি এইরূপ লোকের সঙ্গে কথা বলিতে চাই না।
অতঃপর তাহাদের ব্যাপারে নিরাশ হইয়া হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য লোকের সহিত কথা বলার ইচ্ছা করিলেন; কারণ তিনি ছিলেন ধৈর্য ও হিম্মতের পাহাড়। কিন্তু কেহই তাঁহার দাওয়াত কবুল করিল না। বরং কবুল করার পরিবর্তে তাহারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিয়া দিল, আমাদের শহর ছাড়িয়া এক্ষুণি বাহির হইয়া যাও এবং যেখানে তোমার চাহিদা হয়, সেইখানে চলিয়া যাও। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাহাদের নিকট হইতে সম্পূর্ণ নিরাশ হইয়া ফিরিয়া যাইতেছিলেন, তখন তাহারা শহরের ছেলেদেরকে তাঁহার পিছনে লেলাইয়া দিল। তাহারা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিত ঠাট্টা-বিদ্রূপ করিতে লাগিল, তালি বাজাইতে লাগিল। পাথর নিক্ষেপ করিল। পাথর নিক্ষেপ করার কারণে তাঁহার উভয় জুতা রক্ত রঞ্জিত হইয়া গেল। এই অবস্থাতেই তিনি ফিরিয়া চলিয়া গেলেন।