

মোঃ ফোরকান জামান, বেনাপোল
সীমান্তে দফায় দফায় পতাকা বৈঠকেও বন্ধ হচ্ছে না ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নির্মম হত্যাকাণ্ড। গত ১৫ বছরে যশোরের বেনাপোল সীমান্তেই বিএসএফের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪১ বাংলাদেশি। তাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ। বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সীমান্তে এমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার না হওয়া আরও বড় সংকট ডেকে আনছে। নিহতদের মধ্যে একজন বিজিবি সদস্য রইচ উদ্দীনও রয়েছেন। স্বজনেরা বলছেন, “এভাবে গুলি করে হত্যা না করে যদি তাদের গ্রেফতার করা হতো, তাহলে হয়তো জীবন রক্ষা পেত।
জীবিকার প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপের গ্রহণের ফলে বেনাপোলসহ শার্শা অঞ্চলের অনেকেই জীবিকার তাগিদে কৃষি কাজ, গবাদিপশু চড়ানো বা মৎস্য আহরণের জন্য শূন্যরেখায় যেতে বাধ্য হন। ভুলবশত সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে চলে গেলে, বা সামান্য অতিক্রম করলেই তাদের ওপর চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন। বিশেষ করে বিতর্কিত ‘স্যুট-অন-সাইট’ নীতি বাস্তবা য়নের মাধ্যমে গুলি করে হত্যা করা এবং নির্যাতনের পর শিরা কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। নিহতদের মধ্যে এখনো ছয়জনের পরিচয় অজানা।
রাইটস যশোর মানবাধিকার সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, “যদি কেউ সীমান্ত অতিক্রম করে, তবে তাকে ধরে আইন অনুযায়ী বিচার করা উচিত। গুলি করে হত্যা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। নিহত বিজিবি সদস্য রইচ উদ্দীনের শ্বশুর আবুল কালাম বলেন, “বিএসএফের গুলিতে নিহতদের পরিবার আজও ন্যায়বিচার পায়নি। আন্তর্জাতিক মহলকেও এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়া দরকার।”
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে বিএসএফের হাতে সারাদেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৮৮ জন বাংলাদেশি। শার্শা-বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নিহতদের স্বজন ও মানবাধিকারকর্মীরা। যশোর শাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান করতে হবে। যুদ্ধ নয়, চাই মানবতার জয়। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।