

মোঃ হাচিবুল হক
জমি বে দখল হলে আপনি ফৌজদারি আদালতে মামলা করলে দ্রুত প্রতিকার পাবেন। ফলে প্রথমে সে বিষয়ে আলোচনা করি। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারামতে যদি কোনো ব্যক্তি তার দখলকৃত জমি হতে (মালিকানা থাক বা না থাক) হঠাৎ করে বেদখল হয়ে যায় কিংবা কোনো ব্যক্তি তাকে জোরপূর্বক বেদখল করে তাহলে জমি হতে বেদখল হওয়ার পর তাকে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে হবে। ফৌজদারি আদালতে মামলা করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় বেঁধে দেয়া আছে আইনে, কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি হতে বেদখল হওয়ার ২ মাসের মধ্যে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে বেদখল করার চেষ্টা হতে বিরত করার জন্য বা সম্পত্তিতে ঐ ব্যক্তির প্রবেশ রোধ করার আদেশ প্রদানের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারার বিধান অনুসারে মামলা করতে পারবেন। অন্যথায় আপনি এই আদালতে মামলা করার এখতিয়ার হারাবেন।
কোনো ব্যক্তি তার সম্পত্তি থেকে বেদখল হওয়ার দুই মাসের মধ্যে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ অথবা ১৪৫ ধারার বিধান অনুসারে মামলা করতে পারবেন। বিবাদীকে দখল করা থেকে নিবৃত্ত করার জন্য বা জমিতে ওই ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে এই ধারাগুলোর অধীনে আদেশ প্রদান করতে পারেন প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এ ধরনের মামলা খুব কম সময়ের মধ্যেই নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।
১৪৪ ধারায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ: ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে উৎপাত বা আশঙ্কিত বিপদের ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ আদেশ জারির ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই ধারা অনুসারে, যেসব ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মনে হয় যে, এই ধারার অধীনে অগ্রসর হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে এবং সমস্যার আশু নিবারণ বা দ্রুত প্রতিকার বাঞ্ছনীয়, সেসব ক্ষেত্রে যে কোনো ব্যক্তিকে ওই ম্যাজিস্ট্রেট কোনো নির্দিষ্ট কাজ করা থেকে বিরত থাকার অথবা কোনো নির্দিষ্ট সম্পত্তি তার দখলে কিংবা তার অধীনে নেয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন, যদি ওই ম্যাজিস্ট্রেট বিবেচনা করেন, তার নির্দেশের কারণে আইনসঙ্গতভাবে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তির প্রতি বাধা, বিরক্তি বা ক্ষতি অথবা বাধা, বিরক্তি বা ক্ষতির ঝুঁকি, অথবা মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তার প্রতি বিপদ অথবা জনশান্তির বিরক্তি, দাঙ্গা বা মারামারি নিরোধের সম্ভাবনা আছে কিংবা তার এই নির্দেশ তা নিরোধে সহায়তা করবে।
দখলদারকে পুনর্বহাল: যখন কোনো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ রিপোর্ট বা অন্য কোনোভাবে সংবাদ পেয়ে এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, তার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে জমি, পানি বা এ দুটির সীমানা সম্পর্কে এমন একটি বিরোধ রয়েছে, যা শান্তিভঙ্গের কারণ হতে পারে, তখন তিনি তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিরোধের পক্ষদের সশরীরে বা আইনজীবীর মাধ্যমে তার আদালতে হাজির হওয়ার এবং বিরোধের বিষয়বস্তুতে প্রকৃত দখল সম্পর্কে তাদের নিজ নিজ দাবি সম্পর্কে বিবৃতি পেশ করার নির্দেশ দিয়ে একটি লিখিত আদেশ দেবেন। উভয় পক্ষ নির্ধারিত তারিখে নিজ নিজ বিবৃতি পেশ করলে ম্যাজিস্ট্রেট সেগুলো পড়বেন, প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন
এবং কোন পক্ষ জমির দখলে ছিল সেটি নির্ণয় করার চেষ্টা করবেন। পূর্ববর্তী দুই মাসের মধ্যে যদি কোনো পক্ষ জোরপূর্বক বেদখল হয়ে থাকেন, তাকে ওই সম্পত্তির দখলদার হিসেবে বিবেচনা করবেন ম্যাজিস্ট্রেট। একই সঙ্গে তাকে তার জমিতে পুনর্বহাল করার উদ্যোগ নেবেন। দেওয়ানি আইনের ডিক্রির মাধ্যমে আইনসঙ্গতভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত দখলে থাকা পক্ষ দখল বহাল রাখবে মর্মে ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দেবেন। আইনগতভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত ওই দখলের প্রতি সব ব্যাঘাত ঘটানো নিষিদ্ধ করে ম্যাজিস্ট্রেট একটি আদেশ দেবেন। লেখক মোঃ হাচিবুল হক, এল,এল,বি (অর্নাস)