মার্চ ২১, ২০২৫
Home » শেখ রাসেলকেও কেন হত্যা করতে হয়েছিল, কারণ জানালেন রাশেদ চৌধুরী
image (83)

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার

১৫ আগস্ট ১৯৭৫, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন। সেদিনের সকালে রেডিওতে ঘোষণা করা হয়, “শেখ মুজিব ইজ ডেড।” কেন শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ক্যু হয়েছিল? কেন তাকে সপরিবারে হত্যা করা হলো? শিশু শেখ রাসেল কেন এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এম রাশেদ চৌধুরী (বীর প্রতীক)।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে এক লাইভ সেশনে যুক্ত হন রাশেদ চৌধুরী। সেখানে তিনি ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সাথে নিজের সম্পর্ক, পরিকল্পনা ও শেখ রাসেলকে হত্যা করার কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পটভূমি:

রাশেদ চৌধুরী জানান, যুদ্ধের পর দেশের অবস্থা দেখে অনেক সেনা কর্মকর্তার মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছিল। ১৯৭২-৭৫ সালের দুর্ভিক্ষ ও লুটপাটের কারণে ইয়াং অফিসারদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়ে যায়। গোপনে একে অপরের সাথে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছিল। ১৯৭৫ সালের দিকে বাকশাল গঠনের পর এই হতাশা আরও গভীর হয়। তবে রাশেদ চৌধুরী জানান, তিনি মূল পরিকল্পনায় অংশ নেননি, শুধু আলোচনা করতেন।

হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা:

রাশেদ চৌধুরী জানান, অপারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর ফারুক, আর রশিদের দায়িত্ব ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একত্রিত করা। শেখ মুজিবের বাসা, সেরনিয়াবাদ, রেডিও স্টেশন ও শেখ মনির বাসাকে টার্গেট করা হয়। রাশেদ চৌধুরী রেডিও স্টেশন দখলের দায়িত্বে ছিলেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রেডিও স্টেশনটি নতুন সরকারের হেডকোয়ার্টার হয়ে ওঠে।

শেখ রাসেল হত্যার কারণ:

শেখ রাসেলকে কেন হত্যা করা হয়েছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে রাশেদ চৌধুরী বলেন, “শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্যরা সেদিন দোতলায় ছিলেন এবং অনেক রণাঙ্গনে লড়াই চলছিল।” তিনি জানান, শেখ রাসেলও নিহতদের তালিকায় ছিলেন কারণ তারও সেদিন কোনো রক্ষা ছিল না। তার মৃত্যু দুর্ঘটনাবশত, যা হত্যাকাণ্ডের অংশ ছিল।

রাশেদ চৌধুরী আরও বলেন, “মুজিবের পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বও যদি রক্ষা পেত, তবে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হয়তো অন্যরকম হতো। তবে শাসকের হাতে শাসন থাকার পরও দেশের পরিস্থিতি যে অগ্নিগর্ভ ছিল, তাতে তাদের নিরাপদ রাখা সম্ভব ছিল না।”

শেখ মুজিবের মৃত্যুর পরের পরিস্থিতি:

রাশেদ চৌধুরী বলেন, “মুজিবের ৪৪ মাসের শাসনকাল ছিল অত্যন্ত কঠিন, দেশের যে অবস্থা হয়েছিল তার কারণে তার মৃত্যুর ঘটনা অনিবার্য ছিল।” তিনি আরও মন্তব্য করেন, মুজিবের শাসনে তিনি একটি অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন, যার ফলে দেশ অস্থির হয়ে উঠেছিল।

এছাড়া, রাশেদ চৌধুরী মুজিবের মৃত্যুর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “এ ধরনের ঘটনা একান্তভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, তবে এটা ছিল দেশের সংকটময় মুহূর্তের একটি অবধারিত পরিণতি।”

এটি ছিল একটি অতুলনীয় সাক্ষাৎকার, যেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের নানা দিক তুলে ধরা হয়।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *