মার্চ ২১, ২০২৫
Home » অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে ঘটছে রাজনৈতিক দখল ও লুটপাটের মত ঘটনা
IMG_20250127_161238

মোস্তাক আহমেদ বাবু, রংপুর

রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলায়  রুহিয়ার বৃদ্ধা নাজু ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ভিটা ছাড়া করেছে দুষ্কৃতরা। ভাঙা ঘড়ির কাঁটা থেমে রয়েছে,সোয়া ৬টার ঘরে। পড়ার টেবিলের বই গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যত্রতত্র,কোরআন শরিফটিও পড়ে রয়েছে ভাঙা শোকেসের ওপরের,এক কোনায়। আর বাড়ির মালিক গালে হাত দিয়ে বসে রয়েছেন ভাঙা চালের বারান্দায়।
রংপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগষ্টে সৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। সেই সাথে পতন হয়েছে সৈরাচার সরকারের অনুসারী ও মদতদাতাদে- রও,গত ৫ আগষ্টের পর সারাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে ঘটেছে রাজনৈতিক দখল ও লুটপাটের মত ঘটনা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল।
তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে,ঠাকুরগাঁও রুহিয়ার বৃদ্ধা নাজুর সাথে। তাই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে গত ২৪ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সমর্থক তকমা লাগিয়ে তার বাড়ি এবং ভিটা লুটপাট,ভাঙচুড় ও দখল করে তাকে করা হয় ভিটে ছাড়া। জানা যায় ঠাকুরগাঁও রুহিয়া থানার ১ নং রুহিয়া ইউনিয়নের বেকামি গ্রামের মৃত মজিবরের স্ত্রী বৃদ্ধা নাজু বেগমের সাথে একই গ্রামের খলিল রহমান ও তার ছেলে রুহুল আমিনের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আস- ছিল,এ সংক্রান্ত একটি মামলাও আদালতে চলমান রয়েছে।
বিরোধীয় জমির ওপরে আদালতের ১৪৪ ধারা জারি থাক- লেও,৫ আগষ্টের পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ-কে কাজে লাগিয়ে,গত ২৪ আগষ্ট সেই জমি এবং বৃদ্ধা নাজুর বাড়িটিও দখল করে নেয় অভিযুক্ত রুহুল আমিন। আর এ কাজে তিনি নাজু বেগমের পরিবারকে আওয়ামী লীগ সমর্থকের তকমা লাগিয়ে দখলে ব্যবহার করেন ভারাটে ছেলেপেলে সহ বিএনপির কিছু সমর্থকদের।সে সময় মারপিটে আহত করা হয় নাজু ও তার বিবাহযোগ্যা কন্যাকে এবং কৃষি কাজ করা একমাত্র ছেলেকে। তাদের বের করে দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় তাদের বাড়িতে ঢোকার একমাত্র প্রবেশ পথটিও। এর পর থেকেই সন্তানদের নিয়ে অন্যে বাড়িতে আশ্রিত রয়েছেন বৃদ্ধা নাজু।
উল্লেখ্য যে নাজু মুখে জানা যায়,আমাদের সাথে একটি জমি নিয়ে খলিল ও তার ছেলে রুহুলের ঝামেলা হয়েছিল। মামলাও চলছে বিষয়টি নিয়ে। আদালত যা রায় দিবে আমরা তাই মাথা পেতে নেব,এবং আদালতের রায়ের অপেক্ষা না করে তারা আমাকে আর আমার সন্তানদের বের করে দেয়। আমি সন্তানদের নিয়ে এ বয়সে অন্যের বাসায় আশ্রিত নিয়েছি। বাড়িতে ঢুকতে গেলে তারা বাধা দেয় প্রতি- বারই,বাড়িতে ঢোকার রাস্তাটিও বন্ধ করে দেয়। তালাবদ্ধ ঘরের নানা আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে।
লোকমুখে শুনছি আমি এবং আমার ছেলে-মেয়ে বাসায় গেলে তারা আমাদের মারপিট সহ মেরে ফেলারো হুমকি দিচ্ছে। আমা দের,শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই,নাজুর ছেলে রাজু হোসেন জানান,বাবা মারা যাবার পর আমাকে সংসা- রের হাল ধরতে কৃষিকাজ করতে হচ্ছে। আমি আর পরিবার নাকি,আওয়ামী লীগ সমর্থক তাই আমাদের বাড়ি ও ভিটা জবরদখল করে আমার মা বোনের গায়ে হাত তুলে বের করে দেয়। আমিও প্রাণের ভয়ে সে এলাকায় আর যেতে পারিনা,জানিনা আমরা কিভাবে আবার নিজেদের বাড়িতে যেতে পারব। নাজু বেগমের প্রতিবেশিরা জানান
দখল কর- তে তারা এত বেশি লোকজন নিয়ে আসছিলো যে আমাদের নিরব দর্শক হয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা। নাজু আর তার পরিবারের ওপর তারা যে অত্যাচার করেছে তা অন্যায়,আদালত যদি নাজু আর তার পরিবারকে উচ্ছেদের নির্দেশ দিতো,তখন না হয় তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিতো। কিন্তু নাজুর বাড়ির রাস্তাটিও বন্ধ করে দেয়ায় তারা আর বাড়িতেও ঢুকতে পারেনা,এটা অমানবিক।আমরা প্রতিবেশিরা আশা করছি সকল সমস্যা কাটিয়ে নাজু ও তার পরিবার নিয়ে আবারও নিজ বাড়িতে বসবাস করবে।
অভিযুক্ত রুহুল আমিনের বাবা খলিল রহমান বলেন,নাজু বেগমরা একসময় আমাদের জমিতেই আশ্রিত ছিল,তারাই আমাদের জমি দখল করে এতদিন ছিলো। তবে বাড়ি ভিটা জবর দখল এবং নাজু ও তার পরিবারের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্ত্বোর দিতে পারেননি। এ বিষয়ে  রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম নাজমুল কাদের জানান,এই ব্যাপারে আদালতে একটি মামলা রয়েছে। তবে নতুন করে বাসার মালামাল লুট বা চুরির বিষয়ে জানিনা। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *