

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে শিগগিরই দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটি কাজ শুরু করেছে এবং আজ বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দলের অবস্থান চূড়ান্ত করা হবে। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের কাজ চলছে। ছাত্রদের পক্ষ থেকে পাঠানো খসড়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিএনপি এই ঘোষণাপত্র পুরোপুরি বাতিল না করে সেটিকে পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে চায়। আইনি ও সাংবিধানিক দিকও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।
ঘোষণাপত্রে বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাতিলের যে প্রস্তাব ছাত্রদের পক্ষ থেকে এসেছে, বিএনপি সেটিকে সমর্থন করছে না। দলটি মনে করে, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ভিত্তি এবং এ ইতিহাসকে বিকৃতি করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বজায় রেখেই ঘোষণাপত্র তৈরি করা হবে।
বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করবে, যাতে তারা সম্মিলিতভাবে ঘোষণাপত্রকে গ্রহণযোগ্য করতে পারে। ৫ আগস্টের পর জাতীয় নাগরিক কমিটি ও ছাত্র প্রতিনিধিদের খসড়া ঘোষণাপত্রে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা বিএনপির মতে অপ্রয়োজনীয়। দলটির অভিমত, এটি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষিত হতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, “আমরা অতীতে দেখেছি আওয়ামী লীগ ইতিহাস মুছে ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু বিএনপি ইতিহাসকে বিকৃত করতে চায় না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাসই ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হতে হবে।”
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, “শুধু ৩৬ দিনের আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন হয়নি, বরং দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বহু মানুষ জীবন দিয়েছে। বিএনপির সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী জেল-জুলুমের শিকার হয়েছে। তাই জুলাই ঘোষণাপত্রে এসবের স্বীকৃতি থাকা উচিত।”
বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র তৈরি করতে চায়, ঠিক যেমনটি ৩১ দফা ঘোষণার সময় হয়েছিল। বিএনপি মনে করে, এটি গণতান্ত্রিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হলে সবার গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, “জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গুম, খুন, নির্যাতনের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা উচিত। আমরা ইতোমধ্যে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি করেছি, যা বিএনপির প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কিছু সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। ৩৬ দিনের আন্দোলনই একমাত্র কারণ নয়, অতীতের লড়াই-সংগ্রামের স্বীকৃতি থাকাও জরুরি।”
বিএনপি আজকের স্থায়ী কমিটির সভায় ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করে তা যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।