

বিশেষ প্রতিনিধি
মিলারদের অসহযোগিতার মুখে খাদ্য মজুদের ঝুঁকি কমাতে চাল আমদানি করছে যশোর জেলা। এ জেলার জন্য বেসরকারি পর্যায়ে ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয় । ৮১ জন আমদানিকারক এ অনুমোদন পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে মায়ানমার থেকে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। এদিকে চাল সরবরাহে চুক্তি না করা মিলারদের লাইসেন্স স্থগিতসহ বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে চিঠি প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে । সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরে চলতি মৌসুমে ধান, চাল ও গমের অভ্যন্তরীণ সংগ্ৰহ হতাশাজনক। বাজারমূল্যের চেয়ে সরকার নির্ধারিত চালের দামের বিস্তর ফারাক হওয়ায় মিলাররা
কাঙ্খিত সাড়া দিচ্ছে না। এর বড় প্রভাব পড়েছে খাদ্য মজুদে । অন্যান্য বছরে এই সময়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধান, চাল ও গমের মজুদ থাকলেও ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার জেলার ৮ উপজেলার ১০টি খাদ্য গুদামে খাদ্য মজুদ রয়েছে ৯ হাজার ৮১৩ মেট্রিক টন । যার মধ্যে ধান রয়েছে ২২ দশমিক ৪০০ মেট্রিক টন, চাল ৯ হাজার ১০৭মেট্রিক টন ও গম ৬৮৩ দশমিক ৮১ মেট্রিক টন । জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে জানান গেছে, বিগত সরকার খাদ্য মজুদ নিশ্চিত না করে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে । একই ধারায় বিগত ৪ মাস ধরে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচি চালু
রাখতে যেয়ে খাদ্য মজুদ কমে যায় । ঝুঁকি কমাতে চলতি বছরে যশোরে আমন ধানের সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় । মিলাররা চুক্তি অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ না করায় অভিযান হতাশাজনক পর্যায়ে রয়েঠে । গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত যশোরে লক্ষ্যমাত্রার ৫৬ দশমিক ২০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে । চলতি বছরের মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আমন সংগ্রহের সময়সীমা থাকলেও সংগ্রহ কার্যক্রমে মিলার পর্যায়ে তেমন সাড়া মিলছেনা । খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে যশোর জেলায় কৃষকের কাছ থেকে ৯ হাজার ৭১৯ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা
হয় । এ ছাড়া চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা জেলায় ১৫ হাজার ৪৮ মেট্রিক টন । এর মধ্যে সেদ্ধ চাল ১৪ হাজার ২৪৭ মেট্রিক টন এবং আতপ চাল ৮০১ মেট্রিক টন । গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় । চলবে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত । ১৫ মার্চ আতপ চাল সংগ্রহ শেষ হবে । সেদ্ধ চাল সরবরাহের জন্য ১০২ জন চালকলের মালিক ৮ হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন । তবে মিলাররা চুক্তি অনুযায়ী চাল দিচ্ছেনা । আবার জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মিলাররা খাদ্যবান্ধব এ কর্মসুচির সাথে সম্পৃক্ত হয়নি । এতে করে চাল সংগ্রহে খাদ্য বিভাগও
বিড়ম্বনায় পড়ে । গতকাল মঙ্গলবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত থেকে গেছে, এদিন পর্যন্ত জেলায় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫৬ দশমিক ২০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে । এখনো পর্যন্ত অর্ধেক চাল সংগ্রহ হয়নি । বাকি সময়ের মধ্যে আদ্যেও চাল সংগ্রহ হবে কীনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে খাদ্য বিভাগ । এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সেফাউর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ সফলে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি । ইতোমধ্যে জলার চুক্তিবদ্ধ মিলারদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছি । তাদের কাছে চুক্তি অনুযায়ী চাল আদায়ে নানা পদক্ষেপ
গ্রহণ করেছি । তিনি বলেন, গত ২১ জানুয়ারি যশোর জেলা প্রশাসনের এক সভায়, চুক্তিবদ্ধ মিলারদের অতিদ্রুত চুক্তি অনুয়ায়ী চাল দেয়ার বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে । একই সাথে যারা এখনো চুক্তি করেনি তাদের বিষয়ে আগামী ১৫ দিনের ভেতর জেলা সংগ্রহ কমিটি সভা করে তাদের লাইসেন্স স্থগিতসহ বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে । এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খাদ্য মজুদ নিয়ে যে শঙ্কা ছিলো সেটি কেটে গেছে ।
যশোর জেলায় বেসরকারি পর্যায়ে ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে । আমদানিকারকরা এসব চাল আমদানি করলে জেলার খাদ্য সংকটের কোনো আশঙ্কা থাকবেনা । তিনি বলেন, যশোরে ধান সংগ্রহে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে ঠিক । কারণ এই জেলায় চিকন ধান ছাড়া মোটা ধানের চাষ হয় না । যে কারণে ধান সংগ্রহে আমরা তেমন সাড়া না পাওয়ায় চুক্তিবদ্ধ মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।