মার্চ ২৩, ২০২৫
Home » প্রণোদনায়ও ঠেকানো যাচ্ছে না তামাকের আগ্রাসন
ততদ

মো: আব্দুল্লাহ ইসলাম সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি

সরকারিভাবে স্থানীয় কৃষি অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের উপর কৃষকদেরকে প্রণোদনা ও ছাত্র নিষিদ্ধ তামাক চাষ  স্মারকলিপি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে  দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না ক্ষতিকর তামাকের আগ্রাসন। লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের প্রায় ১০ হাজার একর ফসলি জমিতে করা তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়েছে বোরো ও রবিশস্য আবাদে। উপজেলা দু’টিতে চলতি মৌসুমে ফসলের মাঠ থেকে শুরু করে, বাড়ির আঙিনা, নদীরপাড় কিংবা স্কুলের মাঠ, কোনো খালি জায়গা বাদ যায়নি যেখানে তামাক চাষ হয়নি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই এ অঞ্চলে কৃষি বিভাগের বোরো ও রবি শস্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কেবলমাত্র কাগজে-কলমেই অর্জিত হয়, বাস্তবে নয়। সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮৪ সালে লামা উপ জেলার মেউলার চর এলাকায় প্রথম বছর ১০ একর জমিতে তামাক চাষের মধ্য দিয়ে লামায় তামাক চাষ শুরু হয়। তারপর থেকে গত ৩৭ বছরে মাতামুহুরী নদীর পলিবাহিত উর্বর এলাকা এবং জ্বালানি কাঠের সহজলভ্যতার কারণে তামাক চাষ গ্রাস করেছে লামা, আলীকদমের বোরো ও রবি মৌসুমের ফসলি জমি।

এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মৌমুমেও লামা, আলীকদম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১০ হাজার একরের অধিক জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। বিভিন্ন তামাক কোম্পানির আওতায় উপজেলা দু’টিতে কৃষকরা তামাক চাষ করছেন। ফলে ফসলি জমিতে একচেটিয়া তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়েছে বোরো ও রবি শস্য আবাদে। তরি-তরকারির ভরা মৌসুমেও এখানে দাম ঊর্ধ্বমুখি। ফসলের মাঠে নেই তৈলবীজ জাতীয় কোনো ফসল। নেই বৈচিত্র্যময় তরি-তরকারি। বোরো মৌসুমের সবুজ ধান ক্ষেতে এখন দোল খায় তামাকের উচ্চ ফলনশীল গাছের ডগা।

জানা গেছে, তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশক, পাওয়ার টিলার, পাওয়ার পাম্প, নগদ ঋণ, সর্বোপরি বাজারজাতকরণের সুবিধা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। এর ফলে কৃষকরা প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও ফসলি জমিতে বোরো ও রবি শস্যের আবাদ না করে ক্ষতিকর তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বিভিন্ন ফসলের উপর কৃষকদেরকে প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না ক্ষতিকর তামাকের আগ্রাসন।

কৃষি বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর প্রায় সাড়ে ৬শ’ কৃষককে বিভিন্ন ফসলের উপর প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ধান, চীনা বাদাম. ভুট্টা, গম, সরিষাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। প্রয়োজনীয় বীজ ও বিভিন্ন ধরনের সার প্রদান করা হচ্ছে। ১৫শ’ কৃষককে বোরো বীজসহ প্রয়োজনীয় প্রণোদনা প্রদান এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে পাওয়ার টিলার, সেচ যন্ত্র ও কীটনাশক ছিটানোর স্প্রে মেশিনও প্রদান করা হচ্ছে। তারপরও কৃষকেরা ক্ষতিকর তামাক চাষে আগ্রহী বেশি।

তামাক চাষীদের সাথে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, আলু, মরিচ, টমেটোসহ বিভিন্ন তরি-তরকারি এবং তৈলবীজ উৎপাদন করলে তা বাজারজাতকরণে নানামুখি সমস্যায় পড়তে হয়। পক্ষান্তরে তামাক চাষ করলে বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তা রয়েছে। তাছাড়া তামাক বিক্রির সমুদয় টাকা প্রায় একসাথেই পাওয়া যায়। যার কারণে অন্য ফসলের তুলনায় তারা তামাক চাষে আগ্রহী। লামা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুকুমার দেওয়ানজী জানান, তামাক চাষ কমিয়ে আনার জন্য কৃষি বিভাগ নানাভাবে কাজ করছে। তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে অন্যান্য ফসল চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদেরকে বিভিন্ন ফসলের উপর প্রণোদনা দিচ্ছে।

পর্যায়ক্রমে তামাক চাষ কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চীনা বাদাম, ভুট্টা, গম, সরিষাসহ যেসব শস্যের উপর সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে সেসব ফসল শতভাগ বাজারজাতকরণ এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিশ্চিত হলে তামাক চাষ কমে আসবে বলে স্থানীয় কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন তাছাড়া পরতে থাকুন.বার বার টাকার হাতছানি

বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় সরকারিভাবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের প্রণোদনা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না ক্ষতিকর তামাকের আগ্রাসন। উপজেলার দুটি এবং সংলগ্ন এলাকাগুলোতে প্রায় ১০ হাজার একর ফসলি জমিতে চলতি মৌসুমে তামাক চাষ হয়েছে। উৎপদিত পণ্যের বাজারজাতের অনিশ্চয়তার কারণে ক্ষতিকর জেনেও তামাক চাষ করছেন কৃষকরা।
তামাক চাষি ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে লামা উপজেলার মেউলার চর এলাকায় প্রথম বছর ১০ একর জমিতে তামাক চাষের মধ্য দিয়ে লামায় তামাক চাষ শুরু হয়। এর পর থেকে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মাতামুহুরী নদীর পলিবাহিত উর্বর এলাকা এবং জ্বালানি কাঠের সহজলভ্যতার কারণে তামাক চাষ গ্রাস করেছে লামা ও আলীকদমের বোরো-রবি মৌসুমের ফসলি জমি।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমেও লামা, আলীকদম ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। বিভিন্ন তামাক কম্পানির আওতায় উপজেলা দুটিতে কৃষকরা তামাক চাষ করছেন। ফলে
লামা-আলীকদম
ফসলি জমিতে একচেটিয়া তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়ছে বোরো ও রবি শস্য আবাদে। এখানকার ফসলের মাঠে নেই তৈল বীজ জাতীয় কোনো ফসল। সবুজ ধানক্ষেতে এখন দোল খায় তামাকের উচ্চ ফলনশীল গাছের ডগা।
জানা গেছে, তামাক কম্পানিগুলো কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশক, পাওয়ার টিলার, পাওয়ার পাম্প, নগদ ঋণ-সর্বোপরি বাজারজাতকরণের সুবিধা প্রদানের শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। এর ফলে কৃষকরা প্রতিবছরের মতো চলতি বছরও ফসলি জমিতে বোরো ও রবি শস্যের আবাদ না করে ক্ষতিকর তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বিভিন্ন ফসলের ওপর কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এর পরও ঠেকানো যাচ্ছে না ক্ষতিকর তামাকের আগ্রাসন।
লামা কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অভিজিত বড়ুয়া জানান, চলতি বছর প্রায় এক হাজার ৬০০ কৃষককে বিভিন্ন ফসলের ওপর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরিষা, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ, ভুট্টা, হেলন,
সূর্যমুখী, অড়হর ও বোরো হাইব্রিড ধান। এ ছাড়া কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ, বিভিন্ন ধরনের সার, পাওয়ার টিলার, সেচ যন্ত্র ও কীটনাশক ছিটানোর স্প্রে মেশিনও প্রদান করা হচ্ছে।
আলীকদম কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, আলীকদমে কৃষি বিভাগ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রায় এক হাজার ৭০০ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
লামা পৌরসভার ছাগলখাইয়া এলাকার তামাক চাষি মো. শাহজাহান জানান, চলতি মৌসুমে ফসলি জমিতে তরিতরকারি বা অন্যান্য ফসল উৎপাদন করলে তা বাজারজাত করার নিশ্চয়তা না থাকায় ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে হয়। তামাক চাষ করলে কম্পানিগুলো নগদ এবং এককালীন মূল্যে উৎপাদিত শতভাগ তামাকই ক্রয় করে। এ কারণেই তিনি তামাক চাষ করেছেন।
লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান জানান, কৃষকদের উৎপাদিত তরিতরকারিসহ অন্যান্য পণ্যের বাজারজাতকরণে অনিশ্চয়তা, পক্ষান্তরে তামাক বাজারজাতকরণের শতভাগ নিশ্চয়তার কারণেই কৃষকরা তামাক চাষে ঝুঁকছেন। তবে আগের তুলনায় কিছুটা কমে আসছে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *