

মোঃ আব্দুল হামিদ,মেহেরপুর ক্রাইম রিপোর্টার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর হামলা মামলার আসামি হিসেবে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত
বৃহস্পতিবার-২০২৫ সকালে দিকে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শারমিন নাহার এ আদেশ দেন, এ সময় জেলা জামায়াত নেতা তারেক মাহমুদ সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়,যার মামলা নং জিআর ২৭৭/২৪মেহেরপুর জেলা কারাগার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭ টাই আসামি হিসেবে ফরহাদ হোসেন ও তার ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুলকে আদালতে নেওয়া হয়।
মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আবু সালেহ মোহাম্মদ নাছিম আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন, তবে বিজ্ঞ আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে মেহেরপুর জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। এর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বুধবার রাতে প্রিজনভ্যানে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে মেহেরপুর জেলা কারাগারে আনা হয়, খবর পেয়ে এলাকার অনেক উৎসুক মানুষ সড়কে বেরিয়ে আসে,জেলা কারাগারের সামনেও কিছু মানুষ ভিড় দেখা যায়,এর আগে থেকেই গোটা শহর এবং কারাগার এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন ছিল। ফলে কোন প্রকার অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই তাকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা জর্জ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. আবু সালে মোঃ নাসিম, তিনি বলেন, আদালতে দুটি মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে তারেক মাহমুদ সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলায় তাকে দুই দিনের রিমান্ড মন্জুর করে উইকেটে জেল জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত।আদালতে আসামিপক্ষের আইজিবি ছিলেন, অ্যাড.ইব্রাহিম শাহীন।৫ আগষ্ট মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর হামলার ঘটনায় সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের রাশেদুল ইসলাম সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন, যার মামলা নং ২৬৩/২৪ ওই মামলার প্রধান আসামি হিসেবে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে বুধবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মেহেরপুরে নিয়ে আসে জেলা পুলিশ।
এদিকে সকাল ৭:৩০ মিনিটে ফরহাদ হোসেনকে আদালতে তোলায় মেহেরপুরের মানুষজনের ভিতর দেখা গেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেহেরপুরের একজন বিএনপি নেতা বলেন, এই প্রথম দেখলাম এতো সকালে আদালত বসিয়ে ফরহাদ হোসেনকে আদালতে আনা হয়েছে,অথচ আমরা ঘন্টার পর ঘন্টার পর ঘন্টা আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে থেকে হাজিরা দিয়েছি,কিন্তু ফরহাদ হোসেন হত্যা মামলার আসামি হওয়া সত্বেও তাকে ভিআইপি ভাবে আদালতে আনা হলো,তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, এখনো কি দেশের আইন সবার জন্য সমান নয়?ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী
কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন বলেন, আমরা অত্যন্ত আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করছি ফ্যাসিবাদের দোসর হত্যা মামলার আসামী, হাজার কোটি টাকা লুটপাটের মহা-নায়ক সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে মেহেরপুর কারাগারে আনার পর থেকেই একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে,এবং সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে লোক চক্ষুর অন্তরালে ভোরে আদালতে হাজির করে স্বল্প সময়ের জন্য শুনানির মধ্য দিয়ে তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।
অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে ডান্ডাবেড়ি, হাতকড়া পরিয়ে অত্যন্ত অমানবিক মর্যাদাহীন ভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা কোর্টের বারান্দায় বিচারের নামে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়,আজকে অন্তর্বর্তীকালীন
সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ৯০ বছর বয়সী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে আট তলায় পায়ে হেঁটে উঠে মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে হয়েছে।মাসুদ অরুন বলেন, আমরা মনে করি ফ্যাসিবাদের দোসরের প্রতি এই সহানুভূতি জনগণের আকাঙ্খার বিপরীত,এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সকলের সিদ্ধান্তকে আমরা অত্যন্ত নিন্দার সাথে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এবং এই ঘটনার বিপরীতে গণতান্ত্রিক শক্তি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে,গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর আত্মগোপন করেন ফরহাদ হোসেন। গত ১৪ সেপ্টম্বর রাতে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে হত্যা মামলায় তাকে আটক করেছিল র্যাব,তার নামে রাজধানী ঢাকাতে বেশ কয়েটি হত্যা মামলা রয়েছে, এছাড়াও মেহেরপুরে রয়েছে আরও কয়েকটি মামলা।