মার্চ ১৬, ২০২৫
Home » যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আই.সি.ইউ যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে
icu (1)

যশোর প্রতিনিধি

বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। এতে করে বৃহত্তর যশো রাঞ্চলের মুমূর্ষু রোগীদের সুস্থ হওয়া বা বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৪ জন প্রশিক্ষিত মেডিকেল অফিসারকে অধিদপ্তরে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, এ হাসপাতালের আই সিইউ খুলনা বিভাগের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।

চিকিৎসা সেবায় প্রথম সারিতে রয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের নিবিড় চিকিৎসা পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। হাসপাতালে আহত রোগীদের দেখা টাকা ও সরকারি প্রকল্পের চিকিৎসকদের দিয়ে এতোদিন চলে আসছিল হাসপাতালের এ আইসিইউ। বৃহত্তর যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরা চুয়াডাঙ্গা  কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও খুলনার অংশ বিশেষ নিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মুমূর্ষু রোগীরা যশোরে এসে এ আইসিইউতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নেন। মুমূর্ষু রোগীদের অধিকাংশ রোগীই মৃত্যুর কবল থেকে বেঁচে যান চিকিৎসা সেবায়। ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে হাসপাতালের বিভিন্ন আইসিইউ ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

রোগীদের সহযোগিতায় তাদের অর্থায়নে এখনো সচল আছে এ হাসপাতালের ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ। যা খুলনা বিভাগের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে সরকারিভাবে। এতে করে বেসরকারি কোম্পানির হাসপাতালের আইসিইউগুলো চলছে না। তাদের আইসিইউ ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার পথে। ঠিক সেই সময় সরকারিভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের কারণে এ ধরনের প্রতিষ্ঠিত একটি আইসিইউ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে করে এ বৃহৎ অঞ্চলের ৩ কোটিরও বেশি সংখ্যক মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ হচ্ছে, হাসপাতালের এ আইসিইউ হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইআরপিপি বা ইমার্জেন্সি রেসপন্স অব পেন্ডেমিক প্রজেক্টের আওতাভুক্ত। আইসিইউ পরিচালনার জন্য এ প্রজেক্টের ৪ জন মেডিকেল অফিসারকে যশোরে নিযুক্ত করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।

সম্প্রতি গত ডিসেম্বর ২০২৪ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেখ হয়ে গেছে। সে সময় ৪ জন মেডিকেল অফিসারকে বদলি দেওয়া হয়েছিল যশোরে হাসপাতালে আইসিইউতে। তারা হলেন, ডা. মশিউল, মরিয়ম, ডা. আজিজুল ইসলাম ও ডা. নিশাত। তারা রোগীদের ভালই চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। কিন্তু তা আর হওয়ার সুযোগ নেই। গত ডিসেম্বরে-২৪ ইআরপিপি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্পটি আর নবায়ন করা হয়নি। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় জনস্বার্থে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পুনরায় প্রকল্প নবায়ন না করে তা বাতিল করে দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পের অধীনে যশোর হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে কর্তব্যরত ওই ৪জন চিকিৎসককে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ অবস্থায় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল কর্তৃৃপক্ষ আইসিইউ পরিচালনায় বিপাকে পড়েছেন। গত ডিসেম্বর তাদের খাতা-কলমে তুলে নিলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানা দেনদরবার করে এক মাসের জন্য (জানুয়ারি-২৫) এ হাসপাতালে রেখেছেন নিজেদের উদ্যোগে। তাদের বর্ধিত একমাত্র ৩১ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। এরপর কী হবে? আইসিইউ চলবে না বন্ধ হয়ে যাবে। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভাবতে শুরু করেছেন। আইসিইউ বিবাগের ইনচার্জ কনসালটেন্ট ডা. মো. রবিউল ইসলাম তুহিন জানিয়েছেন, আইসিইউ চলছে না।

ইআরপিপি প্রজেক্টের মেয়াদ গত ডিসেম্বর শেষ হয়ে গেছে। ৪ জন চিকিৎসক ছিল তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তুলে নিয়েছে। এখন মাত্র ২ জন চিকিৎসক কাজ করছেন। তাদের দেনদরবার করে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নিজেদের উদ্যোগে রাখা হয়েছে। তারা চলে গেলে আইসিইউ আর চলবে না। তাই যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে করে এ অঞ্চলের মুমূর্ষু রোগীরা বিপদে পড়বেন। এখন তাদের খুব সহজে যশোরে চিকিৎসা হচ্ছে। এরপর ঢাকা কিংবা খুলনায় গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে চিকিৎসা নিতে হবে বলে জানান তিনি।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হিমাদ্রি সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, আইসিইউ আর চলবে না। সব বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য ২০২১ সালের জুনে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে করোনা মহামারিতে আক্রান্তদের চিকিৎসায় স্থাপন করা হয়েছিল ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ। এ বিভাগে ৫টি এইচডিইউ ও ৪টি পোস্ট অপারেটিভ বেড রয়েছে। চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে হাসপাতালটি এখন যথেষ্ঠ স্বনির্ভর অর্জন করেছে। যততত্র রোগী ঢাকায় পাঠানোর প্রবণতা কমে গেছে। জনস্বাস্থ্যমূলক এ ধরনের প্রজেক্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বাতিল করায় বৃহত্তর যশোরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আবার অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে সচেতন মহল জানিয়েছেন।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *