
Durgs with spoon and syringe on dark background with side ightning

নজীবুল্লাহ খান,রিপোর্টার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে, বিশেষ করে বিজয়নগর, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলায়যার প্রধান কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আখাউড়ার নূরপুর বিজয়নগরের সিঙ্গারবিলের কাশিনগর, নোয়াবাদী ও নলগুড়িয়া গ্রাম। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব এলাকায় মাদক কারবার চলছে, অথচ পুলিশের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বরং অভিযোগ উঠেছে, কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যই মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও মাদক সহজলভ্য হয়ে গেছে। কিশোর ও তরুণদের একটি বড় অংশ মাদকের কবলে পড়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। ইয়াবা, হেরোইন ফেনসিডিল ও গাঁজা ছাড়াও নতুন ধরনের মাদক দ্রব্য ছড়িয়ে পড়েছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছ নূরপুর , কাশিনগর, নোয়াবাদী ও নলগুড়িয়া গ্রামে মাদকের সহজলভ্যতা এতটাই বেড়ে গেছে যে, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। ইয়াবা, ফেনসিডিল, ও গাঁজা তো রয়েছেই, পাশাপাশি ‘হেরোইন’ এর মতো ভয়ংকর নেশাদ্রব্যও ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের মতে, মাদকের কারণে এলাকার কিশোর-তরুণরা চুরি, ছিনতাই, মাদক সেবন ও পারিবারিক সহিংসতার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে পরিবারের জিনিসপত্র বিক্রি করছে বা ধারদেনায় জড়িয়ে পড়ছে। নলগুড়িয়ার এক বাসিন্দা বলেন, “আগে সন্ধ্যার পর এলাকায় সবাই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করত এখন চারদিকে নেশাগ্রস্ত যুবকের আনাগোনা। পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই, ফলে ভয় নিয়েই থাকতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দিচ্ছে।
মাদক বিরোধী অভিযান চালানো হলেও তা লোক দেখানো বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। একাধিকবার আটক হওয়া মাদক ব্যবসায়ীরা রহস্যজনকভাবে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও ব্যবসা শুরু করছে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মাদক কারবারিরা পুলিশকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করছে। মাঝে মধ্যে দু-একজনকে ধরলেও আসল গডফাদারদের কখনো ধরা হয় না এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছি এবং কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।” তবে বাস্তবে এর খুব বেশি প্রভাব দেখা যাচ্ছে না, বরং দিন দিন মাদকের প্রভাব বাড়ছে।
আখাউড়ার নূরপুর বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্যতম মাদক স্পটে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সন্ধ্যার পর পরই নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ইয়াবা ও হেরোইন বিক্রি শুরু হয়। একদল যুবক বাইকে করে আসে, দ্রুত মাদক সংগ্রহ করে চলে যায়। একজন দোকানদার বলেন, “রাত হলেই এখানে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায় আমরা বাধা দিতে পারি না, কারণ তারা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। পুলিশকেও জানানো হয়েছে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের কাশিনগর, নোয়াবাদী ও নলগুড়িয়া গ্রাম এখন মাদক ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা শক্তিশালী একটি চক্র এখানে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এ চক্রটি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশ্রয়ে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না এই গ্রামগুলোতে মাদকের প্রবেশ মূলত ইন্ডিয়ার বর্ডার থেকে হয়ে থাকে। রাতের আঁধারে চালান আসে, এবং পরে তা স্থানীয় ডিলারদের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ করে কাশিনগর, নোয়াবাদী ও নলগুড়িয়ার নির্দিষ্ট কিছু স্থানে নিয়মিত মাদকের লেনদেন হয়, যা স্থানীয়দের কাছে ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক ব্যবসা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই ব্যবসা পরিচালনা করে। এদের কয়েকজন ব্যবসা পরিচালনার মূল পরিকল্পনা করে, কেউ অর্থায়ন করে, আবার কেউ সরবরাহ ও বিক্রির দায়িত্ব পালন করে। কিছু স্থানীয় যুবক মাদক বিক্রির কাজ করে, যারা মূলত বড় মাদক কারবারিদের হয়ে সরাসরি লেনদেন করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, কিছু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তির আশ্রয়ে থেকেই এ চক্র অবাধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, মাঝে মাঝে কিছু ছোটখাটো মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হলেও আসল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। যাদের ধরা হয়, তারা সাধারণত খুচরা বিক্রেতা, কিন্তু যারা এই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে, তারা বরাবরই আইনের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদকবিরোধী অভিযান যেন লোক দেখানো হয়। কখনো কখনো পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও, কয়েকদিন পরই ধরা পড়া ব্যক্তিরা আবার ব্যবসায় ফিরছে। ফলে স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন পুলিশ কি সত্যিই মাদক নির্মূলে আন্তরিক, নাকি তাদের নিরব ভূমিকার পেছনে অন্য কোনো স্বার্থ জড়িত
নলগুড়িয়ার এক বৃদ্ধ বলেন, “আগে এসব এলাকায় কৃষিকাজ হতো, ভালো পরিবেশ ছিল। এখন শুধু মাদকের রাজত্ব। পুলিশ জানে কারা ব্যবসা করে, কিন্তু ধরার সাহস নেই।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা মাদক নির্মূলে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। কেউ যদি পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের স ঙ্গে যোগসাজশের প্রমাণ দিতে পারে, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। একাধিক মাদক ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সুশীল সমাজের নেতারা বলছেন, শুধুমাত্র পুলিশ প্রশাসনের ওপর ভরসা না রেখে স্থানীয় জনগণকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে তরুণদের সচেতন করতে হবে এবং প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে