মার্চ ২১, ২০২৫
Home » ডিবি পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি: ধানমন্ডি থানা কর্তৃক ১২ ডাকাত গ্রেফতার, লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার
Electrical Service Flyer Poster Temp - Made with PosterMyWall (1)

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার

রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনায় লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানা। গ্রেফতারকৃত ডাকাত সদস্যরা: ১. মোঃ মঞ্জু (৪০)২. সাইফুল ইসলাম (৪০)৩. মোঃ রাসেল (২৮)৪. মোঃ জাহিদ (২৪)৫. মোঃ জাকির ওরফে তৌহিদ (৪০)৬. মোঃ ইসমাইল হোসেন (৩৩)৭. মোঃ হিরা শেখ (৩৫)৮. মোঃ রফিক (৩৫)৯. মোঃ বাধন (৩০)১০. চাঁন মিয়া (৫৪)১১. বেল্লাল চাকলাদার (৪৫)১২. মোঃ আসলাম খাঁন (৪৫)
ডাকাতির বিবরণ:ধানমন্ডি থানার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মোঃ আব্দুল কাদের পেশায় একজন ট্রাক ব্যবসায়ী। গত ২ জানুয়ারি ২০২৫, সন্ধ্যা ৭টায় তার ট্রাক ড্রাইভার মোঃ নয়ন ও হেলপার মোঃ জামিরুল ইসলাম পাম অয়েল বোঝাই ৬০টি ড্রাম ট্রাকে করে চট্টগ্রাম থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উদ্দেশে রওনা হন।
পরদিন ৩ জানুয়ারি রাত ৩:৩০টার দিকে, ধানমন্ডির মিরপুর রোডস্থ হোটেল আড্ডার সামনে ৭-৮ জনের একটি দল দুটি মাইক্রোবাসে এসে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকটিকে থামায়। দুইজন ব্যক্তি লেজার লাইট ও ওয়াকিটকি হাতে সাদা পোশাকে এসে কাগজপত্র দেখতে চায়। পরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ট্রাকটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। ডাকাতদল ড্রাইভার ও হেলপারকে চেতনা নাশক ওষুধ খাইয়ে হাত ও চোখ বেঁধে কেরানীগঞ্জের রসুলপুর এলাকায় ফেলে যায়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের ৭ জানুয়ারি অজ্ঞাত ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় ডাকাতির মামলা দায়ের করেন। অন্য আরেকটি ডাকাতি: এই ঘটনার ১৯ দিন পর, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, রাত ৩টার দিকে একই কায়দায় ডাকাত দল মোহাম্মদপুর থানাধীন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে ৭৫ ড্রাম সয়াবিন তেল বোঝাই একটি ট্রাক ছিনতাই করে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় আরেকটি ডাকাতির মামলা রুজু করা হয়।
তদন্ত ও গ্রেফতার অভিযান: ধানমন্ডি থানার চৌকস দল গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতদের অবস্থান শনাক্ত করে। ৩০ জানুয়ারি মগবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ মঞ্জু, সাইফুল ইসলাম, মোঃ রাসেল ও জাহিদকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে: ৯ জানুয়ারি ডাকাত দলের মূল হোতা মোঃ জাকির ওরফে তৌহিদকে কেরানীগঞ্জের আরশিনগর থেকে, মোঃ ইসমাইল হোসেন, মোঃ হিরা শেখ, মোঃ রফিককে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে, মোঃ বাধনকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পানগাঁও থেকে, চাঁন মিয়াকে মহাখালী এলাকা থেকে, বেল্লাল চাকলাদারকে শনির আখড়া থেকে এবং মোঃ আসলাম খাঁনকে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মোঃ আসলাম খাঁনের স্বীকারোক্তিতে তার মুন্সিগঞ্জ বিসিক এলাকার গোডাউন থেকে:
১০টি তেলভর্তি ড্রাম (ওজন ১৮৫০ কেজি, বাজারমূল্য আনুমানিক ২,৯৬,০০০ টাকা) এবং ৩৬টি খালি তেলের ড্রাম উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা নোহা গাড়ি, একাধিক বাটন ফোন ও লুন্ঠিত ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে। ডাকাতদের অপরাধমূলক অতীত: ধানমন্ডি থানার সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মোঃ জাকির ওরফে তৌহিদ: ১০টি মামলা ,মোঃ জাহিদ: ৮টি মামলা ,মোঃ হিরা শেখ ও মোঃ রফিক: ৬টি করে মামলা ,মোঃ মঞ্জু: ৫টি মামলা ,মোঃ চাঁন মিয়া: ৪টি মামলা ,মোঃ বেল্লাল চাকলাদার: ৩টি মামলা
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছে। ডাকাতির সময় সাধারণত বাটন ফোন ব্যবহার করে এবং ডাকাতি শেষে মোবাইল ফোন ও সিম ফেলে দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যায়। যুবলীগ নেতা বেল্লাল চাকলাদারের সম্পৃক্ততা: গ্রেফতারকৃত ডাকাত সদস্য বেল্লাল চাকলাদার মতিঝিল ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সক্রিয় নেতা। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় একটি এবং উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে। চলমান অভিযান: ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ডাকাতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *