

মালিকুজ্জামান কাকা
ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালী পানিসারায় এখন বেজায় ব্যাস্ত ফুলচাষী। এসে যাচ্ছে বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।১৪ ফেব্রুয়ারী দিনটি এরপর অন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস ২১ শে ফেব্রুয়ারী। আসন্ন তিন দিবসের বাজার ধরতে ব্যস্ত ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। প্রকৃতিতে গরমের আভাস। তাই গোলাপের প্রস্ফুটন ঠেকাতে গোলাপ-কলিতে পরানো হচ্ছে ক্যাপ। এরইমধ্যে দাম বাড়তে শুরু করেছে গোলাপসহ সব ফুলের। গদখালী ফুলের বাজার হচ্ছে আরো জমজমাট। তিন দিবস- বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস আর মাতৃভাষা দিবস ঘিরে ১৫০ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনার প্রত্যাশায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা।। গদখালী ফুলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাইকেল-ভ্যানে বাহারি ফুল নিয়ে বাজারে এসেছেন চাষিরা। তাদের কারও কাছে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা; কারও কাছে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বাহারি সব ফুল। দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা সেই ফুল কিনছেন। ফুল বেচাকেনা বেড়েছে।
ক্রেতা বিক্রেতার হাঁকডাক যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালী বাজারে। হঠাৎ গরম পড়ায় ফুল ফুটে যাওয়ায় বাজারে ফুলের যোগানও বেশি। গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্র মল্লিকা, গাঁদা ফুলের দাম কিছুটা কম হলেও ঊর্ধ্বমুখী গোলাপের দাম। মাত্র কয়েকদিন আগেও যে গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৫ টাকায়, সেই গোলাপ এখন বিক্রি হচ্ছে ৮/১০ টাকা দরে। চাষিদের দাবি, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে বাড়তে শুরু করেছে ফুলের দাম। সামনের দিনগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে এবং তারা লাভবান হবেন। ১০০ পিসের আঁটি বেঁধে ১৩ আঁটি গোলাপ নিয়ে এসেছেন পানিসারার হাঁড়িয়া গ্রামের ফুলচাষী আব্দুল মান্নান। সাইকেলের পেছনে বেঁধে বিক্রির জন্য গদখালী বাজারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। বাজারে আসার পর ব্যাপারীরা দাম-দর করছেন।
আব্দুল মান্নান জানান, ‘এ বছর ফুলের তেমন দাম নেই। দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। আজ বাজারে ১৩০০ পিস ফুল এনেছি। এর মধ্যে ৭ টাকা পিস দরে এক হাজার গোলাপ ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। বাকি ৩০০ গোলাপ একটু কম বলছে, তাই দিইনি। এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে ফুলে একটু লসে আছি। তবে আশা করছি সামনে অনুষ্ঠান। সেখানে ভালো দাম পেলে লাভবান হতে পারবো। চাষী জালাল হোসেন বলেন, ‘১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ফুলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। যে গোলাপ ৩ থেকে ৫ টাকা গত চার দিন আগে বিক্রি করেছি, সেই গোলাপ আজ ৭ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা বিক্রি করেছি ১০ থেকে ১৫ টাকা ও চন্দ্রমল্লিকা দুই তিন টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো দাম পাবো। আকবর হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, ‘প্রথম দিকে গোলাপের দাম বেশ কম পাচ্ছিলাম। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়ছে। ১০ ফেব্রুয়ারী ফুল বাজারে দামের উর্দ্ধগতি দেখা গেছে। ক্ষেতে যে ফুল রয়েছে, তা আগামীতে ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
গোলাপের দাম মূলত আকার, রং ও সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে বলেও তিনি জানান। গদখালীর টাওরা গ্রামের ফুলচাষি কামাল বলেন, ‘আমার কাছে যে চায়না গোলাপ রয়েছে, তার দাম প্রতি পিস ২৫ টাকা। দেখতে সুন্দর ও বেশ কয়েক দিন রাখা যায় বলেএর দাম বেশি। ২৫ কাঠা জমিতে রয়েছে চায়না গোলাপ। আশা করছি ১৪ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে ৩০ টাকার বেশি দাম পাবো এই গোলাপের। বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে গোলাপ ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। ফুলচাষিরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোলাপ ফুল বিক্রি করে বাড়তি টাকা রোজগার করেন। তবে মাঘেও শীত নেই। অনু ভূত হচ্ছে গরম। এই গরমে ফুল সময়ের আগেই ফুটে যাচ্ছে। তাই দ্রুত ফুল কেটে ফেলতে হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফুলচাষিরা। এমন পরিস্থিতিতে ফুলচাষিরা তাদের ফুল সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করছেন ক্যাপ। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই ফুল কাটা হবে। কিছু ফুল কাটা হবে বসন্তের দিন সকালে। আগাম ফুল কেটে রাখলে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এর চাহিদা যেমন থাকে না তেমনি দামও পাওয়া যায় না। এজন্য যেন কলি না ফোটে এবং পাতা ঝরে না পড়ে সেজন্য তারা কলিতে ক্যাপ পরিয়ে দিচ্ছেন। ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ফুলের উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আসন্ন তিনটি বিশেষ দিবস ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন ফুল চাষীরা। কোনো দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক কোনো প্রভাব না পড়লে অন্তত ১৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশাবাদী তারা।