মার্চ ২১, ২০২৫
Home » যশোর শহরের বকুলতলায় ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শেখ মুজিবের বিধ্বস্ত ম্যুরাল 
Untitled-2 copy.jpg10

বিশেষ প্রতিনিধি  

যশোর শহরের বকুলতলা মোড়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিতে নির্মিত বিধ্বস্ত ম্যুরালটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রথম গণক্ষোভের শিকার হয় ম্যুরালটি। এরপর গত বৃহস্পতিবার ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণের ঘোষণা দেওয়ার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়ে যশোরের ছাত্র-জনতা। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দফা ছাত্র-জনতা সর্ববৃহৎ ম্যুরালটি এক্সকেভেটর দিয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ ভেঙে দেয়। তবে সেটি পুরোটা না গুড়িয়েই তারা চলে যান। সেই থেকে বিধ্বস্ত ম্যুরালটি এখনো সেখানে ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশ দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের সময় প্রতিনিয়ত কেঁপে উঠছে দাঁড়িয়ে থাকা অবশিষ্ট অংশটুকু। এজন্য দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত এটি পূর্ণাঙ্গভাবে

অপসারণের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ যশোরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। জানা গেছে, ১৬ ফুট উচ্চতার এ ম্যুরালটি ২০১২ সালের শেষের দিকে ২৯ লাখ ৯ হাজার ৯৫ টাকায় নির্মিত করা হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এটি নির্মাণ করা হলেও সে সময়ে যশোরের অধিকাংশ মানুষের আপত্তি থাকলেও আওয়ামী দুঃশাসনের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস পাননি। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের পর ফ্যাসিস্টদের আইকন চিহ্নিত করে এটি মুছে ফেলতে ছাত্র-জনতা মুজিবের এই ম্যুরালটি আংশিক ভাঙচুর করে সেখানে কালেমা খচিত স্টিকার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় গত ৬ মাসে ম্যুরালটি সেখানে দাড়িয়ে থাকলেও সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে দ্বিতীয় দফা ছাত্র-জনতার আক্রোশে পড়ে ম্যুরালটি। এদিন দিল্লিতে পালিয়ে থাকা

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ভার্চুয়ালি ভাষণ দেওয়ার পরপরই শাবল-কোদাল নিয়ে ভাঙচুর করা হয় ম্যুরালটি। কিন্তু সেদিন রাতে এটি শাবল ও কোদাল দিয়ে ভাঙা সম্ভব না হওয়ায় পরদিন শুক্রবার যশোর পৌরসভা থেকে এক্সেভেটর দিয়ে দিনভর ভাঙা হয় ম্যুরালটি। এক্সেভেটর দিয়েও শতভাগ ভাঙা সম্ভব না হওয়ায় সেটি ওই অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যান ছাত্র-জনতা। স্থানীয়রা জানান, এক্সেভেটর দিয়ে ম্যুরালটির প্রায় ৮০ শতাংশ ধ্বংস করা হয়েছে। এখন শুধুামাত্র কয়েকটি বড় বড় রডের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শরিফুল ইসলাম নামে একজন ইজিবাইক চালক বলেন, গভীর রাতে শহরের পালবাড়ী এলাকা থেকে ভারী যানবাহন প্রবেশ করে যশোর শহরে। এসব যানবাহন যাওয়ার সময় আশপাশের স্থাপনা কেঁপে উঠতে থাকে।

এ অবস্থায় যেকোনো সময় বিধ্বস্ত ম্যুরালটি ভেঙে পড়তে পারে। একই কথা বলেন, মফিজুর রহমান নামে এক স্কুল শিক্ষক। তিনি বলেন, প্রতিদিন রাতে এই ম্যুরালের নিচে অনেক ছিন্নমূল মানুষ বস্তা বিছিয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। আবার অনেক উৎসুক ছেলে-মেয়েরা সকাল-বিকেল এখানে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলে। এ অবস্থায় অরক্ষিতভাবে এটি এখানে রাখা ঠিক নয়। দ্রুত এটি অপসারণ করে অন্যকোনো নান্দনিক স্থাপনা তৈরি করা প্রয়োজন। ইসলামী ছাত্র মজলিসের যশোর শহর সেক্রেটারি আবু দারদা নাঈম বলেন, আমরা বাংলাদেশে কোনো ফ্যাসিবাদের আইকন রাখতে চাই না। এই ম্যুরালকে চেতনায় লালন করে যশোরে আওয়ামী লীগ সব অপকর্ম করেছে। শেখ মুজিবর রহমান এই বাংলাদেশের শত্রু ছিলো। বাবার মতো মেয়েও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে।

আমরা আওয়ামী লীগকে উৎখাত করেছি, এই জাতির সামনে আওয়ামী লীগ আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। সেই বিষয়টি লক্ষ্য করে আমরা অনেকদিন ধরে টেষ্টা করেছি যশোরে এই ম্যুরালটি গুড়িয়ে দিতে। তাই সেদিন যশোর পৌরসভাতে গিয়ে একটি এক্সকেভেটরের আবেদন করেছিলাম। তারা আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে ভাঙচুর শুরু করলেও তা শতভাগ না করে ফেলে রেখে গেছে। আমাদের দাবি পৌরসভা দ্রুত যেনো এ কাজটি সম্পন্ন করে। একই সাথে এই স্থানে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে নিহত যশোরের দুইজন শহীদ ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির আর শহীদ আবদুল্লাহর নামে স্মৃতি ম্যুরাল নির্মাণ করার দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন

বিষয়টি নিয়ে আমরা যশোর পৌরসভার প্রশাসকের সাথে দেখা করে দ্রুত এটি অপসারণ করার কথা বলেছি। যেহেতু এটি ভারী এক্সেভেটর ছাড়া অপসারণ সম্ভব নয়। আমাদের বিশ্বাস পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ম্যুরালটি ভাঙচুর হয়েছি শুনেছি। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা এটি করেছে। তবে আসলে এটির অবস্থা বর্তমান কী আছে সেটি এখনো পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। ছাত্রদের পক্ষ থেকে আমাকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় কী করা যায় সে বিষয়ে আমার কাছে বলার মতো এই মুহূর্তে কিছু নেই। সবার সাথে আলাপ করে যা করা উচিৎ সেটি করা হবে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *