

মোহাম্মদ নুরুল আলম,সাতকানিয়া -চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ী গ্রামে গ্রামীন মেলা ও ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি ) বিকালে অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতায় ৮ টি ঘোড়া অংশগ্রহণ করে। মেলার মূল আকর্ষণ ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা বিধায় এটি ঘৌড়দৌড় মেলা হিসেবে এতদঅঞ্চলে ব্যাপক পরিচিত। দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুর উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা মাঠ। শীতের পড়ন্ত বিকেলে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন সকলেই। পরে প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন , বিশেষ অতিথি হজ্ব কাফেলার স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব মাহমুদুল হক পেয়ারু ও বিশেষ অতিথি লোহাগাড়া থানার ওসি তদন্ত রবিউল ইসলাম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ আরিফ মঈনুদ্দিন , সালাহ উদ্দিন হিরু , উপজেলা যুবদল নেতা মুসলিম উদ্দিন প্রমুখ। মেলা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী মুড়কি-মুড়ি, মোয়া, নিমকি, গজা, কলাই, বাদাম, খাজাসহ নানা ধরণের খাবার, প্লাস্টিক ও মাটির তৈরি শিশুদের বিভিন্ন খেলনা, নারীদের বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী এবং গৃহস্থালী পণ্যের পসরা বসেছে।বৃহৎ এ মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামে মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনেরা বাড়িতে চলে আসে। মেলায় প্রায় তিন দশক ধরে মিঠা মলাই বিক্রি করেন সিরাজুল ইসলাম তিনি বলেন, ‘আমার জন্মের পর থেকেই এই মেলা দেখে আসতেছি। আমার বাপ দাদারাও দেখে আসছেন।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে প্রতিজনের হাতে মিষ্টি মিঠাই ভর্তি পাতিল নিয়ে বাড়ির -উদ্দেশ্যে চলে যায়। কথিত আছে মিষ্টা- মিঠাই ভর্তি এই পাতিল মেয়েদের শুশুর বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আত্মীয়-স্বজনদের নিকট পাঠানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সালা উদ্দিন হিরু বলেন, ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে আসতাম। এখন নিজের বাচ্চাদের নিয়ে মেলা এসেছি। মেলা উপলক্ষে এই এলাকায় ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আত্মীয়-স্বজনরা মেলা উপলক্ষে গ্রামে এসেছে। শৈশবের স্মৃতি তুলে ধরে তৌহিদুল ইসলাম বলেন , ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে আসতাম। মেলা উপলক্ষে এই এলাকায় ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আত্মীয়-স্বজনরা মেলা উপলক্ষে গ্রামে এসেছে। তিনি আরো বলেন, ‘ছোট বেলায় মাটির ব্যাংকে টাকা-পয়সা জমা করে রাখতাম। যাতে ওই টাকা নিয়ে মেলায় আসতে পারি। সে টাকা দিয়ে মাটির ও প্লাস্টিকের তৈরি খেলনা সামগ্রী কিনতাম আর নাগরদোলায় চড়তাম।
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সৈয়দুল আবরার ও সাদ বিন নাছির বলেন, শত বছরের এই মেলা দেখতে আশপাশের উপজেলার নানা শ্রেণিপেশার লাখো মানুষের আগমন ঘটে। প্রশাসনসহ এলাকার সকালের সহযোগিতায় প্রতি বছর শান্তিপূর্ণভাবেই মেলা শেষ হয়। জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সুনামধন্য আলেম হযরত মাওলানা ছৈয়দ মোফাজ্জলুর রহমান (রহঃ) লোহাগাড়ায় এ ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও গ্রামীণ মেলার প্রবর্তন করেছিলেন। শতবর্ষী ও প্রাচীনতম ঘোড়দৌড় মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছর এই ঘোড় দৌড় মেলা অনুষ্ঠিত হয় কে এই বড় মাওলানা হযরত সৈয়দ মুফাজ্জালুর রহমান বড় মাওলানা হযরত সৈয়দ মুফাজ্জালুর রহমান ১৮২০ সালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ সূখছড়ি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মাওলানা হাকিমউদ্দীন (রহ)’র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।
তাঁর পিতার নাম সৈয়দ মতিউল্লাহ মিয়াজী (রহ)। সাতকানিয়া মির্জাখীল গ্রামের বিখ্যাত সৈয়দ পরিবারের সদস্য সৈয়দ মতিউল্লাহ মিয়াজী (রহ) নিজ বাড়িতে বড় মাওলানা প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতে চলে যান। ভারতের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হুগলি মাদ্রাসায় ভর্তি হন। উক্ত মাদ্রাসা থেকে তিনি হাদিস, তাফসির ও ফিকহ শাস্ত্রে ভাল ফলাফল অর্জন করেন।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাঁর মেধা ও চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ঐ মাদ্রাসায় মাওলানা পদে নিয়োগ দেন। সেখানে তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং আধ্যাত্মিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। হুগলি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার দায়িত্ব পালনে জ্ঞান দক্ষতার কারণে তাঁকে উপাধি দেয়া হয় “বড় মাওলানা” হিসেবে।
১৮৯২ সালে তিনি উক্ত মাদ্রাসা থেকে অবসর গ্রহণ করে নিজ গ্রাম সূখছড়িতে চলে আসেন। স্থায়ীভাবে বসবাস করে নিজ এলাকায় স্থাপন করেন মসজিদ ও মাদ্রাসা। তিনি সূখছড়ি এলাকার মানুষের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন আধ্যাত্মিক চর্চা ও ত্বরিকতের মাধ্যমে তিনি সুদূর আরাকান থেকে ফেনী পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন।আঠারো ও ঊনিশ শতকের লেখকের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। তিনি প্রথম বাংলা ভাষায় ইলমুল ক্বিরাত রচনা করেন। ইসলাম সম্পর্কিত বহু গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: এহছানুল মোমেনিন, ফজলুল মোত্তাকি ফজলুল ক্বারী ও ফতোয়া কিতাব ইত্যাদি। বড় মাওলানা সবসময় সাদা ঘোড়ায় চড়ে চলাফেরা করতেন।