

মোঃ ফোরকান জামান, বেনাপোল প্রতিনিধি
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টমস হাউজ। প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে কোটি কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, দেরিতে অফিসে আসা ও কাজে অনীহার কারণে কার্যক্রম দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। ফলে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা নেই, সময়সূচির অবহেলা চরমে সরকারি অফিসে নির্দিষ্ট সময়সূচি থাকলেও বেনাপোল কাস্টমস হাউজে নিয়মের বালাই নেই। কর্মকর্তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো অফিসে আসেন এবং চলে যান। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার পরই বাড়ি ফেরার তাড়া শুরু হয়ে যায়, ফলে কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
কাস্টমসে ৯টি গ্রুপ সক্রিয়ভাবে কাজ করলেও প্রতিটি গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেরিতে অফিসে আসার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কাস্টমস কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামান নিজেও দেরিতে অফিসে আসেন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে: ১২, ১৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি পরিদর্শনে দেখা গেছে, অধিকাংশ গ্রুপ নির্দিষ্ট সময়ে অফিস শুরু করেনি। ১২ ফেব্রুয়ারি কমিশনার কামরুজ্জামান অফিসে আসেন ১০:২৮ মিনিটে, যেখানে সরকারি সময় সকাল ১০টায় অফিস শুরু হওয়ার কথা। ১, ৩, ৪, ৬, ৭ নম্বর গ্রুপ যথাসময়ে অফিসে উপস্থিত ছিল না। ৯ ও ৮ নম্বর গ্রুপের কর্মকর্তারা কিছুটা সময়ানুবর্তী ছিলেন এবং সকলে উপস্থিত ছিলেন।
অফিসে উপস্থিত ছিলেন কেবল তিন নম্বর গ্রুপের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফয়জুল ও চার নম্বর গ্রুপের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শান্তনু। বেশিরভাগ গ্রুপের অফিসে শুধুমাত্র পিয়ন ও কিছু এনজিও কর্মী দেখা গেছে। কাজের অনীহা ও সময়ানুভূতির অভাবে আমদানিকারকদের ক্ষতি কর্মকর্তাদের কাজে গাফিলতির কারণে পণ্য খালাসে বিলম্ব হচ্ছে, ফলে পোর্ট বিল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমদানিকারকদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। কারণ অভিযোগ করলে পরবর্তী সময়ে তাদের কাজ আরও জটিল করে দেওয়া হয়।
এছাড়া, কর্মকর্তাদের মধ্যে সাপ্তাহিক দুই থেকে তিনটি মিটিংয়ের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করার প্রবণতা দেখা গেছে। একবার মিটিং শুরু হলে তা দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত চলে, ফলে কার্যক্রম আরও ব্যাহত হয়। কাস্টমস কমিশনার বক্তব্য দিতে অপারগ কাস্টমসের এই অনিয়ম নিয়ে কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামানের বক্তব্য নিতে বহুবার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি বা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ব্যবসায়ীদের নীরবতা: ‘জলে থেকে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করে লাভ নেই
সংশ্লিষ্ট সি এন্ড এফ (C&F) স্টাফ, ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারকদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কেউ সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। তাদের মতে, কাস্টমসের সাথে প্রতিদিন কাজ করতে হয়, তাই অভিযোগ করলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও বাড়বে। একজন সি এন্ড এফ স্টাফ বলেন, ‘জলে থেকে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করে লাভ নেই’।সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন
বেনাপোল দেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট। প্রতি বছর এই বন্দরের মাধ্যমে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। অথচ এখানে দায়িত্বশীলতার অভাব, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও গাফি লতি চরমে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।বাংলাদেশ কাস্টমস ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) প্রশাসনকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে কাস্টমস কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। সরকারি নিয়মের কঠোর বাস্তবায়ন ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করা হলে আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সবার ভোগান্তি কমবে এবং দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।