

মোঃ আব্দুল হামিদ, মেহেরপুর ক্রাইম রিপোর্টার
সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন পত্নি ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সৈয়দা মোনালিসাকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারী-২৫ দিবাগত রাতে ঢাকার ইস্কাটন রোডের একটি বাড়ি থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেন একটি বিশ্বসস্থ সূত্রের বরাত দিয়ে মেহেরপুর সদর থানার ওসি শেখ মেজবাহ উদ্দীন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সৈয়দা মোনালিসার নামে মেহেরপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার উপর হামলাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে। প্রশাসনসহ এলাকার মানুষ এতোদিন জানতেন মন্ত্রী পতি সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম সরকার পতনের পরপরই কানাডাতে পালিয়ে গেছেন,কানাডাতে পালিয়ে যাওয়ার ভূঁয়া তথ্য মন্ত্রীরর পরিবার ও দোষররা সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছিল
এদিকে সৈয়দা মোনালিসা ইসলামের গ্রেফতারের খবর মেহেরপুর জেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে ভাইরাল হওয়ায় অনেকস্থানে আনন্দ ও উল্লাস প্রকাশ করেছেন জনগণ। খোদ আওয়া মীলীগের নেতা ও স্থানীয়রা জানান, ফরহাদ হোসেন ও তার স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা মিলে মেহেরপুর জেলার মানুষকে শাসন ও শোষন করেছেন, মন্ত্রী যতটা না ক্ষমতাধর ছিলেন সৈয়দা মোনালিসা ইস লাম ছিলেন তার চাইতে বেশি ক্ষমতাধর। প্রশাসন, গোয়েন্দা বিভাগ ও স্থানীয় অনলাইন জুয়াড়িরা জানিয়েছেন, মেহেরপুর জেলায় অনলাইন জুঁয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধপথে রাশি য়াতে গেছে, অনলাইন জুঁয়া নিয়ন্ত্রক ছিলেন সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম, জেলার কয়েক হাজার যুবক, তরুণ এই অনলাইন জুঁয়ায় আসক্ত,অনলাইন জুঁয়াড়িদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাপো র্ট দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা
এনিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে বারবার সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি, অনলাইন জুঁয়াড়িদের দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ও আইনী সুরক্ষা সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম ছিলেন অনলাইন জুয়াড়িদের সামগ্রী, আর এই কথা বলেছেন, সাবেক মন্ত্রীর ছোট ভাই বর্তমানে দুটি মামলায় গ্রেফতার জেলা যুবলীগের আহবায়ক সরফরাজ হোসেন মৃদুল তিনি বলেছেন, মোনালিসা ইসলাম অনলাইন জুয়ার নিয়ন্ত্রক ছিলেন; ‘ক্যাসিনো সম্রাজ্ঞী’ হিসেবে তিনি পরিচিত, মৃদুলের কথা এখন মানুষের মুখে মুখে। সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দোদু ল দুই হাজার কোটি টাকার মালিক,এর সবটাই দুর্নীতি প্রসূত। কানাডাসহ দেশ-বিদেশে তার অঢেল সম্পদ। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এবং মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে মেহেরপুরে দুটি হত্যা মামলা হয়েছে, সরকারি ত্রাণের কোটি টাকার মালামাল আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে, ক্ষমতার পালাবদলের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা এলাকায় থাকলেও মন্ত্রী ও তার ভাইবোন-স্বজন সবাই এখন পলাতক, অথচ ক্ষমতাকালে মন্ত্রী বাইরের ভালো লোক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন,তার আমলে দল পরিবারতন্ত্রের রূপ নিয়েছিল, জেলা কমিটিতে তার স্ত্রী, ভাই, বোন, আত্মীয়স্বজন মিলে ২৩ জন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, মন্ত্রী পঞ্চপান্ডব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিলেন। তিনি বলেন, মন্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ায় দলে স্বস্তির হাওয়া বইছে, মন্ত্রী পতি গ্রেফতার মানুষের মাঝে ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীর মাঝে নতুন সুখবর দিলো। তিনি তিন বার এমপি, প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী হয়ে প্রকৃত নেতাদের ছুড়ে ফেলেছিলেন, কর্মীরা মূল্যহীন হয়ে পড়েছিল,মূল্যবান হয়ে উঠেছিল প্রশাসন, পুলিশ ও হাইব্রিড কিছু তোষামোদকারী নেতা। দলকে হাতের মুঠোয় রেখে মন্ত্রী ফরহাদ মেহেরপুরসহ সারা দেশের টেন্ডার, নিয়োগ, বদলি ও অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা ও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, পুলিশকে ব্যবহার করে অনলাইন জুয়া নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে মাসে ৪-৫ কোটি টাকা কামাতেন তার স্ত্রী মোনালিসা ইসলামের মাধ্যমে।
অনলাইন জুয়ার হোতাদের সঙ্গে মন্ত্রী ও সৈয়দা মোনালিসার সাথে অন্তরঙ্গ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ও অন্যান্য মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সারা দেশের শিক্ষা সেক্টরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন মন্ত্রীর ছোট ভাই সরফরাজ হোসের মৃদুল; স্থানীয় সমাজসেবা, হাসপাতাল ও থানা নিয়ন্ত্রণ করতেন তার ভাগ্নে (মন্ত্রীর অর্থরক্ষক হিসেবে পরিচিত) আমিনুল ইসলাম খোকন,গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথসহ এলজিইডি নিয়ন্ত্রণ করতেন মন্ত্রীর ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, সমবায়, কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদ বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করতেন তার বড় ভাই শহীদ সাদেক হোসেন বাবুল এবং সারা দেশে সরকারি হাসপাতা লের ওষুধ সাপ্লাইবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন মন্ত্রী-পত্মীর পিএস জোহা,জনশ্রুতি আছে, এ নিয়ন্ত্রকদের হোতা ছিলেন মন্ত্রী ও তার স্ত্রী,এদের মাধ্যমেই অর্থবিত্তে ফুলেফেঁপে ওঠেন তিনি। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, তার স্বর্ণ আগে ছিল ২০ ভরি, সর্বশেষ হয়েছে ৪৫০ ভরি, আয় ও সম্পদ সর্বশেষ ২০০ গুণ বেড়েছে।
মন্ত্রীর দুর্নীতির কথা ফাঁস করেছেন তারই ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুল, তিনি এক অডিও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভাইয়ের দুর্নীতির কারণেই আজ আমরা সবাই ঘরছাড়া, পালিয়ে বেড়াচ্ছি এবং মামলার আসামি হয়েছি,ফরহাদ হোসেন নিয়োগ, বদলিবাণিজ্য প্রভৃতি দুর্নীতির মাধ্যমে ন্যূনতম দুই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, কানাডার বেগমপাড়ায় তার বাড়ি আছে, ঢাকায় একাধিক বাড়ি আছে,সবকিছুর নিয়ন্ত্রক ছিলেন মন্ত্রী ও তার স্ত্রী, টাকা ছাড়া টেন্ডার, নিয়োগ, বদলি কিছুই হতো না, তিনি বলেন, মন্ত্রীর স্ত্রী মোনালিসা ক্যাসিনো সম্রাজ্ঞী হয়ে পুলিশের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন, ক্ষমতা হারানোর পর ৫০ কোটি টাকা দিয়েছেন মামলা থেকে রক্ষা পেতে। তাই তার নামে কোনো মামলা হয়নি, স্ত্রীর কারণেই আমার ভাই নষ্ট হয়েছে।
মন্ত্রীর উপার্জনের বেশি অংশ পাচার হয়েছে কানাডায়, তার অবৈধ উপার্জনে কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি আছে,দুবাইয়ে শারজা স্টেডিয়ামের পাশে মন্ত্রী বাড়ি কিনেছেন বলে জানা গেছে,এ ছাড়া ঢাকার মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও বনানীতে তিনটি ফ্ল্যাট আছে। কিশোরগঞ্জ ও মেহেরপুরে আছে দুটি বাড়ি। আত্মীয়স্বজনদের নামে-বেনামে কয়েক শত বিঘা জমি ও ব্যাংকে জমা আছে বিপুল পরিমাণ অর্থ,ক্ষমতা হারানোর কিছুদিন আগে শহরে ১১ কোটি টাকা মূল্যে দেড় বিঘা বাড়ির জমি কিনেছেন তার স্ত্রীর পিএস জোহার নামে, মেহেরপুর শহরের দীঘিরপাড়ায় ৭ কোটি টাকা মূল্যের ৯ বিঘা জমি আছে,শহরের পিটিআইয়ের সামনে তার বাবার নামে সরকারি টেক্সটাইল কলেজ নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণকৃত এক বিঘা জমিটি তিনি ২০ লাখ টাকায় কিনে পরে সরকারের কাছে ৭ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন,সদর উপজেলার বুড়িপোতা, হরিরামপুর, ইছাখালী, মদনা, আমঝুপি, শ্যামপুর ও মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর, মোনাখালী ও আনন্দবাস এলাকায় বাড়ি ও চাষাবাদের শতবিঘা জমি কিনেছেন বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন।