মার্চ ২৩, ২০২৫
Home » জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে অবাধে প্রবেশ করছে ভারতীয় চোরাচালান পণ্য আঙুল ফুলে কলাগাছ লাইন বাহিনী
IMG-20250217-WA0002

ইসমাইল খান, নিয়াজ ক্রাইম রিপোর্টার

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে প্রবেশ করছে ভারতীয় চোরাচালান পণ্য। চোরাচালানের পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মদ, ভারতীয় সুপারি, চিনি, শাড়ি, লেহেঙ্গা, ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধ সামগ্রী, মোবাইল হ্যান্ডসেট, প্রসাধনী সামগ্রী, মোটরসাইকেল ও ভারতীয় গরু-মহিষ। একটি চক্র সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে আদায় করছে মোটা অঙ্কের চাঁদা। বিনিময়ে প্রবেশ করছে চোরাচালান পণ্য।

সরেজমিন ঘুরে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকার ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকরা জানান, জৈন্তাপুর উপজেলা সীমান্তের ১২৭৮ খাসিয়া হাওড়, শান্তিমাইর জুম, ১২৭৯ মোকামপুঞ্জি, ১২৮০ শ্রীপুর, ১২৮১ ছাগল খাউরী, ১২৮২ মিনাটিলা, ১২৮৩ রাবার বাগান, লম্বাটিলা, ১২৮৪ কেন্দ্রী হাওড়, ডিবির হাওড়, ১২৮৫ ডিবির হাওড় ফরিদের বাড়ি এলাকা, ১২৮৬ রিভার পিলার (ডিবির হাওড় আসামপাড়া), ১২৮৬ ঘিলাতৈল, ১২৮৭ তলাল, ফুলবাড়ি, ১২৮৮-১২৮৯ টিপরাখলা, ১২৯০ করিমটিলা, কমলাবাড়ি, ১২৯১-১২৯২ ভিতরগোল, ১২৯৩-১২৯৪-১২৯৫ গোয়াবাড়ি, বাইরাখেল, ১২৯৬ হর্নি এলাকা দিয়ে প্রবেশ করছে ভারতীয় চোরাচালান পণ্য।

এসব পণ্য থেকে প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চোরাকারবারীদের কাছ থেকে লাইন ম্যানেজের নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঢাকার বাসিন্দা সামদ ও আরমানের বিশ্বস্ত সহচর, বিজিবির সোর্স বা লাইনম্যান নামে পরিচিত আব্দুল করিম ওরফে বেন্ডিজ করিম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মির্জান আহমদ রুবেল, ইউপি সদস্য মো. মনসুর আহমদ, মাসুম আহমদ সুজন, মো. জাকারিয়া। উল্লেখ্য, বিগত কয়েক মাসে জৈন্তাপুর উপজেলায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক আটক করা হয়।

বিগত সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই চক্রের সদস্যরা উপজেলা সীমান্ত পথের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা সময়ের সাথে সাথে তাদের চোরাচালান বাণিজ্যের ধরন পরিবর্তন করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা জুড়ে তাদের চোরাচালান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ডেবিটকার্ড হিসেবে ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ৫ আগস্টের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে সরকার পরিবর্তন হলে চক্রের সদস্যদের আর ডেবিট কার্ডের প্রয়োজন হয়নি। তারা আধিপত্য বিস্তার করে সীমান্তের চোরাচালান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টায় ১২৮০-১২৮১ পিলারের মধ্যবর্তী বানানঘাট এলাকায় মহিষের চালান নিয়ে আসার প্রাক্কালে পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চোরাকারবারীদের হামলায় ৪ জন পাথর শ্রমিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এলাকার সচেতন মহল জানান, সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান ব্যবসার কারণে উপজেলা জুড়ে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে উঠতি বয়সী যুবসমাজ মারাত্মকভাবে মাদকের ছোবলে পড়ে তরুণ প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ বলেন, “জৈন্তাপুর এলাকা দিয়ে যে ভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য প্রবেশ করছে, তাতে যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যুবসমাজকে রক্ষায় চোরাচালান বন্ধ না করা গেলে জৈন্তাপুর ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে। সেই সাথে চোরাচালানের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, “জৈন্তাপুরে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকসহ চোরাচালান পণ্য আটক করা হয়েছে। বর্তমানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *