মার্চ ২১, ২০২৫
Home » রংপুরে তিস্তায় হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসল নষ্টের আশঙ্কা
1739771975770 (2)

নুর ইসলাম নোবেল, রংপুর বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান

খরা মৌসুমে হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা পাড়ের কৃষক ও বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এতে তিস্তায় জেগে ওঠা চরে পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, ডাল ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারত থেকে তিস্তার পানি ছেড়ে দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এতে তিস্তায় ন্যায্য পানির হিস্যা আদায়ের দাবিতে আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিকে ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আয়োজকরা।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিস্তা পাড়ের মানুষের ন্যায্য পানির হিস্যা আদায়ের দাবিতে ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে লাখ লাখ মানুষের সমাগমের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এতে গ্রামীণ খেলাধুলা ও নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। তবে হঠাৎ করেই তিস্তার পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী মনে করছেন, ন্যায্য দাবী নস্যাৎ করতেই ভারত এমন দায়িত্বহীন আচরণ করছে। উল্লেখ্য, প্রতিবছর এসময় তিস্তায় কোনো পানিপ্রবাহ থাকেনা। কিন্তু ৪৮ ঘন্টার কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই তিস্তায় পানি বৃদ্ধি স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে এমন সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল শনিবার বিকেল ৩টার পর থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বিকেল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ৫০.১০ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম (স্বাভাবিক ৫২.১৫ সেন্টিমিটার)। তবে পানি প্রবাহ অব্যাহত থাকলে পানির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে তিস্তা পাড়ের কৃষকরা আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তিস্তার জেগে ওঠা বালুচরে রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, ডাল ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। স্থানীয় কৃষক কদম আলী বলেন, ‘তিস্তার পানি নিয়ে আমরা আন্দোলন করতে যাচ্ছি, ঠিক তখনই ভারত পানি ছেড়েছে। এটা তাদের চাল। এই মৌসুমে সাধারণত ভারত পানি ছাড়ে না।’ আদিতমারীর গোবর্ধন এলাকার সাত্তার মিয়া বলেন, ‘লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে আমাদের আয়োজনে তিস্তা খননের দাবি জানাবো। এভাবে আর তিস্তার দুঃখ চাই না। এই সময়ে ভারত পানি ছেড়ে আমাদের দাবি নস্যাৎ করতে চায়।’
তিস্তা পাড়ের জেলে সবুর আলী বলেন, ‘তিস্তার জেগে ওঠা চড়ে ৩ বিঘা জমিতে রসুন ও পেঁয়াজ আবাদ করেছি। ভারত পানি ছাড়লে আমার ফসল ডুবে যাবে। এখন ফসল নিয়ে শঙ্কায় আছি।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপ অপারেটর নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ বেড়েছে। কত পানি আসবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয়কমিটির সাংগঠনিক  সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘তিস্তার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি শুনেছি। তবে আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা পাড়ে ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *