

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
দূর সম্পর্কের এক চাচার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার একটি বাসায় কাজ করতে গিয়েছিলেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার মাত্র পাঁচ বছর বয়সী শিশু জোসনা। কিন্তু সেখানে যাওয়ার দুই মাসের মাথায় তিনি হারিয়ে যান। ভাগ্যের চক্রে অন্য এক পরিবারের কাছে আশ্রয় পেয়ে সেখানেই বেড়ে ওঠেন এবং পরে তাদের মাধ্যমেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে স্বামী শহীদুল ইসলাম ও একমাত্র ছেলে ইয়াসিনকে নিয়ে গাজীপুরের দক্ষিণ সালনা এলাকায় বসবাস করছেন তিনি।
শৈশবে হারিয়ে ফেলা পরিবারকে ফিরে পাওয়ার আশা কখনও ছাড়েননি জোসনা। দীর্ঘ ২৩ বছর পর অবশেষে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আপন ঠিকানা’-এর মাধ্যমে স্বজনদের খুঁজে পান তিনি। এতে তার দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার অবসান ঘটে। নতুন পরিবারের ছায়ায় বেড়ে ওঠা জোসনা জানান, ২০০২ সালে তার মা তাকে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর একটি বাসায় কাজের জন্য পাঠান। সেখানে কাজ করতে না পারায় তিনি নিয়মিত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন। একদিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন, কিন্তু পথ ভুলে যান।
এ সময় এক অচেনা মহিলার পিছু পিছু হাঁটতে গিয়ে অবশেষে এক নতুন পরিবারে আশ্রয় পান। বছরখানেক সেখানে থাকার পর তাকে আরেকটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়, সেখান থেকেও আ রেক পরিবারের কাছে যান। শেষ পর্যন্ত যে পরিবারে স্থায়ীভাবে বড় হন, তারাই তাকে বিয়ে দেন। পরিচয়ের অভাবে বঞ্চনার শিকার পরিবারের পরিচয় না থাকায় পড়াশোনার সুযোগ পাননি জোসনা, এমনকি দেশের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি থেকেও বঞ্চিত হন। সামাজিকভাবে বহুবার কটূক্তির শিকার হয়েছেন তিনি।
আপন ঠিকানা’ ও হারানো পরিবারের সন্ধান জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল ‘আপন ঠিকানা’-এর একটি পর্বে ২৯ জানুয়ারি জোসনা তার হারিয়ে যাওয়ার করুণ গল্প তুলে ধরেন। তার দেওয়া আংশিক তথ্যের ভিত্তিতে ‘আপন ঠিকানা’ কর্তৃপক্ষ তার পরিবারকে খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেয়। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর তাকে তার হারিয়ে যাওয়া পরিবারে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয় অনুষ্ঠানটি।
১০ ফেব্রুয়ারি ইউটিউবে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, ২৩ বছর পর মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়দের কাছে পেয়ে আবেগে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন জোসনা। এ আবেগঘন দৃশ্য লাখো দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
আপন ঠিকানা’র সাফল্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশআরজে গোলাম কিবরিয়া সরকার বলেন, “আমরা গত চার বছরে প্রায় সাড়ে চারশো হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে ছি। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য আত্মতৃপ্তির জায়গা। আল্লাহ আমাদের দ্বারা এই মহান কাজটি করিয়েছেন, এজন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। জোসনা তার হারিয়ে যাওয়া পরিবারকে খুঁজে পেতে সহায়তা করার জন্য ‘আপন ঠিকানা’ কর্তৃপক্ষ, তার কর্মস্থলের সহকর্মী শামীম ভাইসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই ঘটনায় ‘আপন ঠিকানা’-এর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও বেড়েছে। অনেক পরিবার এখন তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের সন্ধান পাওয়ার আশায় অপেক্ষায় রয়েছে।