

মোঃ আসিফ, বিশেষ প্রতিনিধি
গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক পরিবর্তন নিয়ে জনমনে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে স্থানীয় জনপ্রশাসন আওয়ামী লীগের অনুগত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান প্যানেল চেয়ারম্যানরা। তবে এই নিয়োগ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।মধ্যপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আসান আলী, যিনি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার
এবং দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সক্রিয় সহ-সভাপতি। গণঅভ্যুত্থানের পর যখন আওয়ামী লীগের নেতাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন কীভাবে একজন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি পুনরায় ক্ষমতা পেলেন, তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।বিশেষ করে, আসান আলীর অতীত রাজনৈতিক ভূমিকা এবং ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থানের কথা মাথায় রেখে অনেকেই বলছেন, পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে মুক্তির যে প্রতিশ্রুতি, তা আসলে বাস্তবে কার্যকর হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি ক্ষমতায় আসার পরপরই ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেছেন এবং আওয়ামী লীগকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার পরপরই আসান আলী ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের প্রচার সামগ্রী রাতের আঁধারে গায়েব হয়ে যাচ্ছে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর একটা পরিবর্তন আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখছি, আগের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আওয়ামী নেতারাই আবার ক্ষমতা ধরে রেখেছে, আর বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করছে।
এই অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা চলছে, কীভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হলো? প্রশাসন কি ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ক্ষমতায় রেখে দিচ্ছে, নাকি এটি কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার ফল স্থানীয় জনপ্রশাসনের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও, বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। স্থানীয়দের ধারণা, যদি এই ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকে, তবে নতুন যে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে, তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হবে। জনগণের দাবি, মধ্যপাড়াসহ দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ প্রশাসন নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।