মার্চ ২১, ২০২৫
Home » শিরোনাম: ময়লা ও আবর্জনার কারণে তিতাস নদীর বেহাল অবস্থা, প্রশাসনের নেই কোন উদ্যোগ
20250218_150303

নজীবুল্লাহ খান

তিতাস, বাংলাদেশ: দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী তিতাস বর্তমানে ময়লা ও আবর্জনায় সয়লাব হয়ে পড়েছে। নদীটির আশেপাশের এলাকা থেকে ময়লা ফেলা, শিল্পকারখানার দূষণ এবং জনগণের অসচেতনতায় এই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং, তিতাস নদী এখন শুধুমাত্র একটি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকা এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নদীটির চারপাশে গড়ে ওঠা অবকাঠামো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব এবং প্রশাসনের উদাসীনতা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদীর পাড়ে অবস্থিত বাজার ও শিল্প ইউনিটগুলি নিয়মিতভাবে তাদের বর্জ্য নদীতে ফেলে দিচ্ছে। এর ফলে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে এবং মৎস্য ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। তিতাসের পানি এতটাই দূষিত যে, এটি এখন সাঁতার কাটা কিংবা পানি ব্যবহার করার জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

নদীটির ওপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীরা অভিযোগ করছেন, আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এক সময়ের প্রাচুর্য আর নেই, এবং স্থানীয় বাজারেও মাছের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। মৎস্যজীবী আলী হোসেন বলেন, “আগে নদীতে নেমে আমরা খুব সহজেই প্রচুর মাছ ধরতে পারতাম। এখন তো নদীটাই বিষাক্ত হয়ে গেছে। এছাড়া, কৃষকেরাও নদী থেকে সেচ নেওয়ার জন্য নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে নদীর পানি দূষিত হওয়ায় তারা চাষাবাদে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কৃষক রোজ আলী জানান, “নদীর পানি আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন আমরা এই পানির উপর নির্ভরশীল হতে পারছি না।

স্থানীয় পরিবেশবাদীরা প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে তিতাস নদী এবং এর আশেপাশের জীবনধারণের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হবে। তারা নদীটি রক্ষার জন্য একটি পরিষ্কার অভিযান চালানোর পাশাপাশি, প্রশাসনের কাছে নিয়মিতভাবে মনিটরিং ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলেন, নদী রক্ষায় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর প্রচারণা চালানো জরুরি। স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা ছাড়া নদী রক্ষার কার্যক্রম সফল হবে না। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্কুল ও কলেজগুলোতে কর্মশালা আয়োজন করা এবং স্থানীয় যুবকদের নিয়ে সচেতনতা ক্যাম্প আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা জানান, তারা বিষয়টি জানেন এবং নদীটি পরিষ্কার করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে তা এখনো কার্যকর হয়নি। জনগণের প্রশ্ন, এই পরিকল্পনা কবে বাস্তবায়িত হবে? স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, যদি প্রশাসন দ্রুত উদ্যোগ না নেয়, তবে আগামী প্রজন্মের জন্য তিতাস নদী একটি স্মৃতি হয়ে যাবে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, তিতাস নদীটির রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের জন্য একটি সুসংগঠিত উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রশাসন, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তিতাস নদীকে তার প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে, নইলে এটি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেবে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *