মার্চ ২১, ২০২৫
Home » বিএনপি জামায়াতকে ইঙ্গিত করে সেনা প্রধানের লাল সংকেত 
1000079020 (1)

মো:আজগর আলী, জেলা প্রতিনিধি চট্টগ্রাম 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক মিত্র থাকলেও তাদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে মত পার্থক্য ও দ্বন্দ্ব প্রায় দেখা গেছে।ছাত্র শিবির ও ছাত্র দলের সংঘর্ষের ইতিহাসও অনেক পুরানো।জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও ইসলামী শাসনব্যবস্থায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ ধরে গণতন্ত্র,সামাজিক সুবিচার,সুশাসন প্রতিষ্ঠার  লক্ষ্যে এক হয়ে রাজনীতি করছে,আন্দোলন করছে,নির্বাচন করছে,সরকার গঠন করছে,গণতান্ত্রিক সকল আন্দোলন সংগ্রামে পাশাপাশি বসে কর্মসূচিও পালন করছে।১৯৯১সালে বিএনপিকে সরকার গঠনে পূর্ণ সহায়তাও করছে জামায়াতে ইসলামী।২০০৮ সালের নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্ঠতায় আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পর পরই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধ চলা কালিন
মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের কার্য শুরু করে যা যুদ্ধাপরাধের বিচার নামে পরিচিত।বির্তকিত এই বিচারে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কে  মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে ও  জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করে। জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারের বিরোধিতা না করলেও জামায়াতের প্রতি প্রকাশ্যে  সমর্থন জানায় এবং বেগম খালেদা জিয়া অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের পক্ষে বক্তব্য বিবৃতিও দেয়।২০০৮সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পেক্ষাপট তৈরি হয়েছিলো
২০০৬সালের ২৮শে অক্টোবর।সেদিন আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে তার ওপর নৃত্য করে যে দৃশ্য দেখে সারা দুনিয়ার বিবেকবান মানুষের হ্রদয়ে নাড়া দিয়েছে।এর পর পরই বাংলাদেশের রাজনীতি তার গতিপথ হারিয়ে অন্ধকার গর্তে নিমজ্জিত হয়েছে।যার ফলে ১/১১ সৃষ্টি হয় ও রাজনৈতিক দল গুলোর ওপর  নেমে আসে ইতিহাসের নির্মম বর্বরতা।পরবর্তিতে ২০০৮সালে ১/১১সরকার গরিষ্ঠ আসনে জিতিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগকে  সরকার গঠনে সহায়তা করে।আওয়ামীলীগ বরাবরের মতোই বিরোধী দল বিরোধী মত দমনের মধ্যমে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে শুরু করে রাজনৈতিক বিভাজন দমন- পীড়ন,গুম,খুন,মিথ্যাচার,অপপ্রচার, অপবাদ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূন্য করার হীন  ষড়যন্ত্র,উন্নয়নের নামে মহাদূর্নীতি যা স্বয়ং জাতি সঙ্ঘ সহ
সারা দুনিয়ায় স্বীকৃতি পায়।বিএনপি ও জামায়াতে  ইসলামি যৌথভাবে দক্ষতার সাথে বৃহত্তর জনমত গঠন করলেও বার বার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অপকৌশলে হেরে যায়। আওয়ামী লীগে বরাবরের মতোই ৭১ইস্যু,জঙ্গী ইস্যু,এসব দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামি কে দমাতে চেষ্টা করে,দূর্নীতি ২১ আগষ্টের বোমা হামলা সহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি কে কোনঠাসা করে।বিএনপি পশ্চিমা বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে জামায়াতের সঙ্গে কৌশলি সম্পর্ক রাখতে চেষ্টা করে ও  অনেক সময় কৌশলগত দুরত্বও বজায় রাখে যা জামায়াত শিবির  ভালোভাবে নেয় নি।’২৪এর ৫ই আগষ্টের পটপরিবর্তন জামায়াতে ইসলামির জন্য বড় নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে।জামায়াতে ইসলামি ৫ই আগষ্টের পরে অনেকটা কৌশলি ভূমিকায় চলে যায় এবং বিএনপির দুর্বল দিক গুলো
কে রাজনীতির মঞ্চে নিয়ে আসে যা স্পষ্টত বিএনপিও ভালোভাবে নেয় নি।জামায়াতে ইসলামি আগামী নির্বাচনে ৩০০আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় এবং ছোট ছোট ইসলামি দল গুলোকে কাছে টানতে চেষ্টা করে যা মুলত আগামি নির্বাচনের জন্য জামায়াতের চমৎকার নির্বাচনী কৌশল ও আসন ভাগাভাগিতে বিএনপিকে চাপে রাখার চেষ্টা। বিএনপি সব সময় চায় জামায়াত কম আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক,কিন্তু সবসময়  জামায়াত তাদের জন্য বেশি আসন দাবি করে যা বিএনপির জন্য অসস্থিকর।এবার জামায়াত ছোট ছোট  বিকল্প ইসলামী দল গুলোকে
কাছে টানতে  শুরু করে জামায়াত মঞ্চে।ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ,খেলাফত মজলিসসহ অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে এবং কিছুটা সাড়াও মিলছে যা বিএনপি মোটেই ভালোভাবে নেয়নি।তাছাড়া বিএনপিতে জামায়াত বিরোধী অনেক নেতা জামায়াতের সঙ্গে জোট করাকে দলের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর মনে করেন এবং আওয়ামী লীগের মতো ৭১ ইস্যুটিকে বার বার  সামনে আনতে চেষ্টা করে।কিন্তু তরুণ ও উদারপন্থী জামায়াত-বিএনপি সমর্থকরা বিষটিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখে।যা মুলত
বিএনপি জামায়াতের দ্বন্দ্বের কারন।জামায়াত মূলত  রাজনৈতিক কৌশল, নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ ও বিএনপির ওপর চাপ  সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বার বার বিএনপির কিছু কিছু দুর্বলতা প্রকাশ্যে আনতে চেষ্টা করে, প্রতি:উত্তরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আবারও ৭১ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসে যার ফলে দু’দলের মধ্যে দূরত্ব আরো বাড়তে থাকে।ক্যাম্পাসে ছাত্রদল  ছাত্র শিবির অতীতে সব সময় মারমুখি ছিলো।শিবিরের উত্থানকে ছাত্র দল তাদের জন্য হুমকি মনে করে।যদিও দুই ছাত্র সংগঠন কখনো কাউকে কেউ ছাড় দেয়নি যা অনেক সময় আইন শৃঙ্খলা অবনতি দিকে ধাবিত হয়েছে।
বর্তমানেও অনেক জায়গায় তাই হচ্ছে।আবার আমাদের দেশের রাজনীতিতে দুষ্কৃতিকারীদের অনুপ্রবেশ সব দলে সব সময়ই ছিলো।যদিও জামায়াতে ইসলামী কখনো তা স্বীকার করে না এবং বরাবরের মতোই বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে বলে  দুষ্কৃতিকারীরা আমাদের সংগঠনের কেউ নয়।দুষ্কৃতিকারীদের অনুপ্রবেশ আইন শৃঙ্খলা অবনতির জন্য প্রধান দায়ী বলে অনেকটা সেনা প্রধান দু’দলকে বার্তা দেয় এবং এর শেষ  পরিণতি যে কতটুকু ভয়ঙ্কন হতে পারে তারও ইঙ্গিত দেয়।তাছাড়া রাজনৈতিক দল গুলোর অনৈক্যের সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের সকল স্থরের দুষ্কৃতকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে,রাজনৈতিক
দল গুলোর অনৈক্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষা কারী সংস্থার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়ায় এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে।দু’দলের এ ভাবে কাঁদা ছুড়া ছুড়ির ফলে যেকোনো মুহুর্তে তৃতীয় কোনো শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করে আবারও ২০০৬ মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ১/১১মতো কোনো ঘটনা ঘটালে তার দায়ভার বিএনপি জামায়াতেকেই নিতে হবে।সেনা প্রধানের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট।সাধারণ জনতা মনে করে এখনো সম্ভব দু’দল সুসম্পর্ক তৈরি করে অতীতের ন্যায় জোটবদ্ধভাব নির্বাচন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল গুলোকে সাথে নিয়ে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা ঘোষণা করা যাতে দল গুলোর সম্পর্ক দূঢ় হয় এবং সুন্দর রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *