

মো:আজগর আলী,জেলা প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
বাংলাদেশে নার্সিং পেশা এক নীরব সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জের নাম।বাংলাদেশের পেশাগত এই মহান দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে একজন হাসপাতালের কর্মরত নার্স বা সেবিকাকে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জে ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন নার্সের হাজারো সমস্যার মধ্যে কিছু কিছু তুলে ধরা হলো:অনেক নার্সকে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় কাজ করতে হয়,যা গতকিছু আগে বেসরকারি ক্লিনিকে কর্মরত একজন নার্স ক্লিনিকের মালিক দ্বারা ধর্ষণের শিকা হয়েছে যা জাতির জন্য যেমন অসম্মান জনক তেমনিভাবেই একজন নার্স কতটুকু নিরাপত্তা হীনতায় কাজ করতে হয় তা পরিষ্কার।তাছাড়া বিশেষ করে রাতের শিফটে কাজ করা একজন নার্সের জন্য চ্যালেঞ্জ।
হাসপাতালে সহিংসতার রোগী বা স্বজনদের দ্বারা নার্সদের প্রতি অব্যবস্থাপনা, হুমকি বা শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটে।যেখানে নার্সদের পক্ষে খুব কম সংখ্যক মানুষই কথা বলে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে নার্সদের বেতন তুলনামূলকভাবে কম।বেতনের বাহিরে তাদের বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধাও নাই।যেখানে একজন ডাক্তার বাহিরে চেম্বার করা বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির সম্মানিত গিফট বিদেশ ভ্রমণ সহ হাজারো সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকলেও একজন নার্স এসব থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত। তাছাড়া অতিরিক্ত কাজ করলেও অনেক সময় ওভারটাইম ভাতা থেকেও বঞ্চিত হয়।সরকারি নার্সদের কিছু সুবিধা থাকলেও বেসরকারি নার্সদের ক্ষেত্রেই কোনো সুযোগ সুবিধা নাই।দীর্ঘ শিফট ও দিনে ১০-১২ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কাজ করতে হয়।পর্যাপ্ত বিরতি না পাওয়ায় অনেক সময় টানা কাজ করতে হয়, খাবার বা বিশ্রামের সময় খুবই সীমিত যা নার্সদের জন্য খুবই কষ্টকর।অপরদিকে রোগীর তুলনায় নার্সের সংখ্যা অনেক কম, ফলে একজন নার্সকে অতিরিক্ত রোগীর দায়িত্ব নিতে হয়।অনেক সময় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া নার্সদের কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হয় যা নার্সদের জন্য চ্যালেঞ্জ।
আবার দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, রোগীর মৃত্যু বা সংকট মোকাবিলা ডাক্টারেরা করার কথা থাকলেও অনেক সময় নার্স কে এই সংকট মোকাবেলা করতে হয় যা একজন নার্সকে মানসিক ভাবে চরম হতাশ করে।প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতির ক্ষেত্রে ডাক্তারদের তুলনায় নার্সদের অবদান অনেক সময় খাটো করে দেখা হয় এবং অবমূল্যায়ন করা হয়।প্রশিক্ষণ ও ক্যারিয়ার উন্নয়নের ক্ষেত্রে নার্সদের উচ্চতর নার্সিং প্রশিক্ষণের সুযোগ সীমিত।উচ্চতর পড়াশোনার জন্য নার্সদের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।টেকনোলজি ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রশিক্ষণও নার্সদের জন্য কম।নার্সদের কে অনেক হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না। সরকারি চাকরিজীবী নার্সদের কিছু অবসর সুবিধা থাকলেও বেসরকারি নার্সদের ক্ষেত্রে তা নেই।অনেক বেসরকারি নার্স সহজে মাতৃত্বকালীন ছুটিও পান না। বাংলাদেশের হাসপাতালের নার্সদের জন্য স্বাস্থ্যবান্ধব কর্মপরিবেশ, উপযুক্ত বেতন, পর্যাপ্ত স্টাফ, প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়, তাহলে নার্সদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং স্বাস্থ্যসেবার মানও আরও ভালো হবে।