এপ্রিল ১৯, ২০২৫
Home » বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির কারণে পাইকগাছা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন কৃষি যন্ত্রপাতির অতীত ঐতিহ্য
IMG_20250317_161313

এফ,এম,এ রাজ্জাক, পাইকগাছা, খুলনা

খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গ্রামাঞ্চলে একসময় কৃষি ছিল প্রধান জীবিকা। এই অঞ্চলের কৃষকরা প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার করে আসছিলেন নানা ঐতিহ্যবাহী কৃষি যন্ত্রপাতি। তবে সময়ের সাথে সাথে আধুনিক যন্ত্রপাতির আগমন এবং প্রযুক্তির পরিবর্তন অনেক প্রাচীন কৃষি যন্ত্রপাতিকে হারিয়ে ফেলেছে, যা আজকাল শুধু স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রাচীন কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার: পাইকগাছা উপজেলার কৃষকেরা এক সময় পণ্য উৎপাদন, জমি চাষ ও ধান মাড়াইয়ের জন্য ব্যবহৃত করতেন নানা ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র। এসব যন্ত্রগুলো ছিল প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি এবং সেগুলোর কাজ অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও সহজ ছিল।
ঢেঁকি:- ধান মাড়াইয়ের জন্য ব্যবহৃত ঢেঁকি ছিল এক সময় অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি মূলত কাঠ দিয়ে তৈরি হতো এবং হাতে চালানো হতো। একসময় ঢেঁকি দিয়ে ধান মাড়াই করা ছিল অত্যন্ত প্রচলিত এবং স্বাভাবিক বিষয়। তবে এখন, আধুনিক মেশিনের ব্যবহার শুরু হওয়ার ফলে ঢেঁকির ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। লাঙল:- পাইকগাছার কৃষকেরা লাঙল দিয়ে জমি চাষ করতেন। এটি গরু দ্বারা টানা হত এবং জমি চাষের জন্য ব্যবহার করা হত। তবে বর্তমানে লাঙল বেশিরভাগ জায়গায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর জায়গায় এসেছে আধুনিক ট্র্যাক্টর, যা কৃষিকাজকে আরও দ্রুত এবং সহজ করে দিয়েছে। জাঁতা :- জাঁতা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি যন্ত্র, যা মাটি কাটার জন্য ব্যবহৃত হতো। এটি কাঠ দিয়ে তৈরি হত এবং মাটির গভীরে ক্ষুদ্র গর্ত তৈরি করার জন্য কৃষকরা এটি ব্যবহার করতেন। বর্তমানে আধুনিক মেশিন ব্যবহার শুরু হওয়ার ফলে জাঁতা আর তেমন ব্যবহৃত হয় না।
গরুর গাড়ি:- পাইকগাছা উপজেলার গ্রামে একসময় গরুর গাড়ি ছিল গ্রামের প্রধান যাতায়াতের উপকরণ। তবে, গত কয়েক দশকে গাড়ি, মাইক্রোবাস এবং অন্যান্য আধুনিক যানবাহন আসার ফলে গরুর গাড়ি এখন প্রায় বিলুপ্ত।
কামান:- ধান কাটার জন্য কামান নামে একটি যন্ত্র ছিল, যা হালকা উপকরণ দিয়ে তৈরি হত। এটি হাতে চালানো হত এবং বেশিরভাগ সময় ধান কাটার কাজ সহজ করত। বর্তমানে কামানের জায়গায় এসেছে মেশিন বা ট্র্যাক্টরের সাথে সংযুক্ত কাটার যন্ত্র, যা দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম। আধুনিকতার দাপটে পুরনো যন্ত্রপাতি বিলুপ্তি:- সময়ের পরিবর্তনে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে, যা কৃষিকাজকে আরও ত্বরান্বিত ও সহজ করেছে।
এতে একদিকে যেমন কৃষকদের সময় ও শ্রম বাঁচছে, তেমনি অপরদিকে পুরনো যন্ত্রপাতি হারিয়ে যাচ্ছে।যদিও এসব পুরনো যন্ত্রপাতির কিছু কিছু ব্যবহার এখনও পাইকগাছার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে সীমিত আকারে দেখা যায়, তবুও পুরোপুরি বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহ্য। সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ও সংরক্ষণ উদ্যোগ: পাইকগাছা উপজেলার কৃষকরা যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতেন তা ছিল তাদের জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষকরা নিজেদের কষ্টের ফল পেতেন। কিন্তু আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে এটি হারিয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ সংস্কৃতির অনেক মূল্যবান দিক বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এখনো কিছু কৃষক পুরনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে, তবে তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কৃষি সংস্থা, সরকারি উদ্যোগ ও স্থানীয় সংগঠনগুলো এসব ঐতিহ্য সংরক্ষণে কার্যক্রম শুরু করেছে। গ্রামে কিছু কিছু স্থানে এই যন্ত্রগুলোর প্রদর্শনী ও পুনরুদ্ধারের কাজ চলমান রয়েছে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *