

হামিদুর রহমান, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :
রাজশাহীর তানোরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগপন্থী এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, তিনি নীতিমালা লঙ্ঘন করে এবং অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপত্তি উপেক্ষা করে, অর্থের বিনিময়ে বহুল আলোচিত ও বরখাস্ত হওয়া ভিলেজ ইলেকট্রিশিয়ান (কামারগাঁ ইউনিয়ন পরিষদ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি) জহিরুল ইসলাম লিটনকে স্বপদে বহালের নির্দেশ দেন। এই ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র। সচেতন মহল আলোচিত লিটনের পুনর্বহাল আদেশ বাতিল এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত সময়ে কামারগাঁ ইউপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি লিটন সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তার বিরুদ্ধে সংযোগ প্রদানে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, টাকা নিয়েও সংযোগ না দেওয়া, অবৈধ মটরের সংযোগ প্রদান, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অর্থ আদায়সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে একটি তদন্ত কমিটি লিটনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পায় এবং তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের পর লিটনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম তার হয়ে কাজ চালিয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, জাহাঙ্গীর গোপনে মিটারের সিল কেটে মিটার স্থানান্তরের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় তৎকালীন ডিজিএম জহুরুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, জাহাঙ্গীর ধানোরা গ্রামে একাধিক গ্রাহকের মিটার অবৈধভাবে স্থানান্তর করেন, যা বিদ্যুৎ আইন ২০১৮ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
এতসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ডিজিএম রেজাউল করিম গত ১০ এপ্রিল লিটনকে পুনর্বহালের আদেশ দেন। গত ৫ আগস্ট সকালেও লিটন কামারগাঁ ইউপির নেতাকর্মীদের নিয়ে তানোরে গিয়ে ছাত্র আন্দোলনবিরোধী মিছিলে অংশ নেন। অথচ এ সময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মী গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় আত্মগোপনে ছিলেন। প্রশ্ন উঠছে, তখন এত বিতর্কিত একজন নেতাকে কোন বিবেচনায় স্বপদে ফিরিয়ে আনা হলো? সূত্রমতে, কামারগাঁ ইউপির চৌবাড়িয়া এলাকার এক যুবদল নেতা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে লিটনের পুনর্বহালের জন্য প্রভাব বিস্তার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জহিরুল ইসলাম লিটন সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। আমি ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে দিতে হাপিয়ে উঠেছি। এখন আমি কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নই। এদিকে, তানোর পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম রেজাউল করিমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) রমেন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তথ্য অনুযায়ী, বিষয়টির অধিকতর তদন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্বচ্ছতা রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হচ্ছে সচেতন মহলের পক্ষ থেকে।