

নুর ইসলাম নোবেল, রংপুর বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
তিস্তা মহাপরিকল্পনায় অর্থায়ন নিয়ে সরকারের পরিষ্কার অবস্থান নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ১৬ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার পরও তিস্তা মহাপরিকল্পনাকে গুরুত্ব দেয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারও তিস্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বন্দর উন্নয়নের জন্য ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনায় অর্থায়ন নিয়ে সরকারের পরিষ্কার অবস্থান নেই।
শনিবার (৩ মে) দুপুরে রংপুর মহানগরীর একটি হোটেলের মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে লক্ষাধিক মানুষ নিয়ে গণপদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আগামীকাল রোববার বিকেল ৩টায় রংপুর নগরীর শাপলা চত্ত্বর থেকে গণপদযাত্রাটি বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিলা স্কুলে গিয়ে শেষ হবে।
গণপদযাত্রা কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুসহ পরিবেশকর্মী, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনকারী ও তিস্তাপাড়ের ক্ষতিগ্রস্তরা অংশ নেবেন। ভারত কখনোই বাংলাদেশের ভালো চায় না উল্লেখ করে আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ভারত তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দেয়নি। একটার পর এক বাঁধ দিয়ে তিস্তাকে পানিশূন্য করে মরুভূমিতে পরিণত করেছে। শুধু তিস্তা নয়, ফারাক্কাতে একই অবস্থা। তারা আমাদের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে কখনোই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেনি। কারণ ভারত কখনোই বাংলাদেশের ভালো চায় না। ভারতের সাথে বিগত সময়ে হওয়া বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো নিয়ে বর্তমান সরকার কিছুই খোলাশা করছে না।তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা চীন সফর করেছেন। চীনা রাষ্ট্রদূতের সাথে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকের ফলাফলও জাতির সামনে আনা হয়নি। এছাড়া তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন তিস্তা মহাপরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন। অথচ যখন তিস্তাপাড়ের মানুষ ভাঙনের শিকার হয়, বন উজার হয়, ফসলি জমি ভেঙে যাচ্ছে, তখন পরিবেশবাদীরা কিছু বলছে না। সাবেক এই উপমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এর আগে বিভিন্ন সংগঠন তিস্তা ব্যারাজ অভিমুখে রোডমার্চ, মানববন্ধন, সমাবেশসহ স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করেও বিগত সরকারের আমলে আশ্বাসের বাণী ছাড়া মেলেনি কিছু। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তাপাড়ের মানুষজন ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দুদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এরপরেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে সরকার কোন গুরুত্ব দেয়নি। আমরা মনে করি এতে সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, মহানগরের আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তাবেষ্টিত পাঁচ জেলার ১১ স্থানে তাঁবু খাটিয়ে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাপনী অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ব্যতিক্রমী এই কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেয়।