জুন ২০, ২০২৫
Home » তুরিন আফরোজের পিএইচডি ডিগ্রি ভুয়া: অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি আদালতে দাখিল
images (1)

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার

বিচারব্যবস্থা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় যিনি দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিলেন, সেই আলোচিত আইনজীবী তুরিন আফরোজের পিএইচডি ডিগ্রি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়ার নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস (UNSW)। এই সংক্রান্ত প্রমাণপত্র রোববার (৪ মে) সকালে বাংলাদেশের আপিল বিভাগে দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাষ্ট্রের পক্ষে দায়িত্বরত আইনজীবী ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দার গণমাধ্যমকে জানান, “ইউএনএসডব্লিউ কর্তৃপক্ষ তাদের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করেছে যে, তুরিন আফরোজের নামে কোনো পিএইচডি ডিগ্রির রেকর্ড তাদের কাছে নেই। এমনকি এই নামে কেউ কোনো সময় সেখানে শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধিত ছিলেন না।”

প্রাক্তন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও আলোচিত আইনজীবী হিসেবে তুরিন আফরোজ দেশের উচ্চপর্যায়ের মামলায় যুক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আদালতে প্রমাণসহ আসা এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সরাসরি অস্বীকৃতির বিষয়টি দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের একাংশ বলছে, যদি প্রমাণিত হয় যে তিনি ভুয়া ডিগ্রি দেখিয়ে দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, তবে এটি হবে একটি গুরুতর প্রতারণা ও নৈতিকতার চরম লঙ্ঘন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লিখিত বক্তব্য:

সংযুক্ত নথিতে ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস কর্তৃপক্ষ সাফ জানায়,

“আমাদের ডাটাবেইস অনুযায়ী, Turin Afroz নামে কোনো শিক্ষার্থী কখনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেননি। তার নামে কোনো পিএইচডি রেজিস্ট্রেশন, থিসিস সাবমিশন বা গ্র্যাজুয়েশন সংক্রান্ত রেকর্ড আমাদের কাছে নেই।”

এই লিখিত বক্তব্যটি রাষ্ট্রপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে আপিল বিভাগে দাখিল করেছে।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তুরিন আফরোজ ব্যক্তিগতভাবে কিংবা কোনো গণমাধ্যমে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। তার এই নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে। তবে আদালতের পরবর্তী শুনানিতে তার আইনজীবী পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

সিনিয়র আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, এটি একটি দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক ঘটনা। একজন পেশাদার আইনজীবীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে এমন বিতর্ক বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও পেশাগত মর্যাদার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, বিষয়টি পুরোপুরি তদন্তের আগে মন্তব্য করা উচিত নয়।

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অঙ্গনে বহুল পরিচিত আইনজীবী তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসায় আইনজীবী সমাজ, বিচার বিভাগ ও সাধারণ জনগণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এখন সবার দৃষ্টি আপিল বিভাগের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। যদি ভুয়া ডিগ্রির অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে এটি শুধু একজন ব্যক্তির নয়, পুরো বিচারিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থার বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *