মে ১২, ২০২৫
Home » পশু আমদানির প্রয়োজন নেই, বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে সরকারের বিশেষ প্রস্তুতি: ফরিদা আখতার
Korbani_poshu_ready

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার

আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি জানিয়েছেন, চাহিদা মেটানোর পরও এবার প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকবে। ফলে গবাদিপশু আমদানির প্রয়োজন নেই এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

রোববার (৪ মে) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এসব তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ফরিদা আখতার বলেন, “এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে রয়েছে—৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু ও মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল ও ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতির পশু। যা মোট ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি পশুর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশীয় খামারিরাই এখন এতটা উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন যে, বাইরে থেকে পশু আনার প্রয়োজন পড়ছে না। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ভোক্তারা চাহিদামতো পশু ক্রয় করতে পারবেন।”

উপদেষ্টা জানান, স্বাস্থ্যসম্মত ও নীরোগ গবাদিপশু নিশ্চিত করতে সারা দেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। হরমোন ও স্টেরয়েডের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে খামারিদের সচেতন করতে ৮৩ হাজার ৬৫৬ জন খামারিকে প্রশিক্ষণ৬ হাজার ৬০০টি উঠান বৈঠক এবং ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৮টি লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫৩ হাজার ২৬৩টি খামার পরিদর্শন করে খামারিদের অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি পরিহারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা খামারিদের নিয়ে যেসব প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি, তার ফলে এই বছর নিরাপদ ও স্বাস্থ্যবান পশুর সরবরাহ নিশ্চিত হবে বলে আশা করছি।”

ফরিদা আখতার বলেন, “গবাদিপশুবাহী ট্রাক ছিনতাই ও হয়রানি রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর সমন্বিতভাবে কাজ করবে। কোরবানির পশু যাতে নির্বিঘ্নে বাজারে পৌঁছাতে পারে, তার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে ‘হটলাইন (১৬৩৫৮)’ চালু রাখা হবে, যেখানে পশু পরিবহণ বা কেনাবেচা নিয়ে যেকোনো সমস্যা জানালে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া কোরবানির পশুর হাটগুলোর কারণে মহাসড়কে যানজট বা জনদুর্ভোগ যাতে না হয়, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, “বাজার অস্থিতিশীল যেন না হয়, সেজন্য আমরা খামারিদের আশ্বস্ত করেছি এবং তারাও আশ্বস্ত করেছেন। চাঁদাবাজি ও অযাচিত খরচ যাতে পশুর দামে প্রভাব না ফেলে, তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মোবাইল কোর্ট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “কোরবানির ঈদ যেন সবার জন্য আনন্দের হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি। পশুর সরবরাহ, পরিবহণ, স্বাস্থ্যসেবা, বাজার ব্যবস্থাপনা—সব ক্ষেত্রেই আমরা পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।”

এবারের কোরবানি ঈদে দেশীয় গবাদিপশুর স্বয়ংসম্পূর্ণতা শুধু আমদানির প্রয়োজন মিটিয়েছে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্ত ভিত দিয়েছে। সরকারের সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ এবং খামারিদের পরিশ্রমে এবার দেশের মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত, সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য পশু কোরবানি করতে পারবে—এটাই সরকারের প্রত্যাশা।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *