জুন ২০, ২০২৫
Home » রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ প্রধান অন্তরায়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের স্পষ্ট ঘোষণা
333

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চললেও, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনই শুরু হওয়ার কোনো বাস্তবসম্ভাবনা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন।

রবিবার (৪ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক সরকারি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মিয়ানমারে বর্তমানে গৃহযুদ্ধ চলছে, রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়েছে। এই মুহূর্তে সেখানে কাউকে ফেরত পাঠানোর অর্থ হবে তাদের আরও বড় ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া। আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার বিবেচনায় আমরা সেটি করতে পারি না।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “বাংলাদেশ সবসময়ই শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পক্ষেই কাজ করেছে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাস্তবিক কোনো প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।”

গৃহযুদ্ধ, জান্তা বিরোধী লড়াই এবং বিশৃঙ্খলার মাঝে প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং জান্তা বিরোধী প্রতিরোধ বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। বহু প্রদেশ এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, হাজার হাজার সাধারণ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এমন একটি দেশেই বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর কথা চিন্তাও করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের কূটনৈতিক পদক্ষেপ অব্যাহত

তৌহিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। আমরা নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের নীতিতেই অটল। যতক্ষণ না মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফিরে আসে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হয়, ততক্ষণ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি হবে না।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একক সৃষ্টি নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যা। তাই এর সমাধানও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমেই হওয়া উচিত।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় ও নীতিনিষ্ঠ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের কূটনৈতিক রূপরেখার স্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়। যতদিন না মিয়ানমারে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারের পরিবেশ নিশ্চিত হয়, ততদিন রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো অসম্ভব—এ সত্যটি এখন আন্তর্জাতিক মহলেরও অনুধাবন করা জরুরি।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *