মে ১২, ২০২৫
Home » ২০ বছর পর নির্দোষ প্রমাণিত: শতবর্ষী অহিদুন্নেসার মুক্তি, হারানো জীবনের নীরব আহাজারি
image

মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার 

চাঁদপুরের একটি হত্যা মামলায় প্রায় দুই দশক ধরে কারাভোগের পর অবশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পেয়েছেন শতবর্ষী নারী অহিদুন্নেসা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি পেয়েছেন মুক্তির স্বাদ, তবে এর বিনিময়ে হারিয়েছেন সময়, পরিবার ও স্বাস্থ্যের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ।

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। দীর্ঘ ২০ বছর কারাভোগ শেষে তিনি যখন মুক্ত বাতাসে পা রাখেন, তখন তার চোখে আর দৃষ্টি নেই—কারাগারের ভেতরেই তার দৃষ্টিশক্তি প্রায় পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন,

জেলেই মরে যেতে হবে কিনা, এই চিন্তা অহিদুন্নেসাকে সবসময় তাড়া করত। তিনি খুবই বয়সী ছিলেন, হাঁটাচলায় কষ্ট হতো। এমনকি মুক্তির আগেই তার দৃষ্টিশক্তিও চলে যায়।”

কারা কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, মুক্তির সময় অহিদুন্নেসা যাদের সহযোগিতায় ছাড়া পেয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদিনের বন্দিজীবনের পর কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি শুধু স্বাধীনতার স্বাদ নেননি, বরং হারানো জীবনের ভার নিয়ে এগিয়ে গেছেন এক নতুন অনিশ্চিত অধ্যায়ে।

মৃত্যুর আগ মুহূর্তে অহিদুন্নেসা জানলেন—তিনি কোনো অপরাধ করেননি। একজন নিরপরাধ নারী ২০ বছর ধরে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা ও বিচার ব্যবস্থার নিস্পৃহতার শিকার ছিলেন। বন্দিজীবনে তিনি হারিয়েছেন তার স্বামী ও এক সন্তানকে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুক্তি পেলেও যা হারিয়েছেন তা কোনোদিনই ফিরে পাবেন না।

অহিদুন্নেসা কেবল একজন নারী বন্দি নন, তিনি এই সোনার বাংলার বিচার-প্রতীক্ষায় প্রহর গোনা হাজারো নিরীহ মানুষের প্রতীক। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও অহিদুন্নেসাদের মতো মানুষ মিথ্যা মামলার জালে ফেঁসে যাচ্ছেন। কারো নামে রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে মামলা, আবার কেউ ধরা পড়ছেন প্রভাবশালীদের প্রতিহিংসায়।

এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—বিচার বিলম্ব মানেই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়া। অহিদুন্নেসার হারিয়ে যাওয়া জীবন কেবল একটি ‘ব্যতিক্রম’ নয়, এটি একটি জাতিগত ব্যর্থতা।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *