

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে সামরিক উত্তেজনা চরমে উঠেছে। ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার ঘটনার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। বুধবার এই অভিযানের ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ জানিয়েছেন, ভারত পাকিস্তানের কোটলি, ভাওয়ালপুর এবং মুজাফ্ফরাবাদে ‘কাপুরুষোচিত ও উস্কানিমূলক’ হামলা চালিয়েছে। তিনি এটিকে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং পাকিস্তান সরকার এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী একটি বড় সামরিক অভিযান “অপারেশন সিন্দুর” শুরু করেছে। এই অভিযানের আওতায় পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও স্নাইপার হামলা চালানো হয়েছে। ভারত সরকার এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, এই হামলাগুলি ছিল “জঙ্গি ঘাঁটিগুলোর ওপর প্রতিরোধমূলক আঘাত”।
ভারতের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনায় নয় বরং শুধুমাত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের আস্তানাগুলোকেই টার্গেট করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “পেহেলগামের নিরীহ পর্যটকদের রক্তের বদলা হিসেবে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী অপারেশন সিন্দুর চালিয়েছে, যাতে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং সীমান্তপারের জঙ্গিবাদকে চিরতরে নির্মূল করা যায়।”
এই ঘটনার পরপরই ইসলামাবাদে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ দেশের নিরাপত্তা কাউন্সিল ও সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। এরই মধ্যে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে এবং ভারতের এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার ফলে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও সংকটের দিকে যাচ্ছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকে বড় হুমকির মুখে ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক মহলের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ এখন একান্ত প্রয়োজন, নতুবা দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষ ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
উল্লেখ্য, ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি একটি হামলায় বহু নিরীহ পর্যটক নিহত ও আহত হন। সেই ঘটনার দায় এখনও কেউ স্বীকার করেনি, তবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, সীমান্তপারের জঙ্গিগোষ্ঠীই এই হামলার মূল হোতা।
বর্তমানে উভয় দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং পাকিস্তান রেঞ্জার্সদের মধ্যে দফায় দফায় গুলিবিনিময়ের খবরও আসছে। উপমহাদেশের দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে এমন উত্তেজনার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষসহ আন্তর্জাতিক সমাজ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।